বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন
বছর দশেক আগের কথা। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হঠাৎ ইচ্ছে হল, তিনি পিএইচডি করবেন। ছেলে পিএইচডি করুক, এটা নাকি তাঁর মায়ের ইচ্ছে ছিল।
ছেলে মায়ের ইচ্ছেপূরণের চেষ্টা করতেই পারেন। কিন্তু হাতে তো অনেক সময় ছিল। তখন করেননি কেন? শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরেই মনে হল যে এবার পিএইডি করে নেওয়া যাক!
মন্ত্রীর ইচ্ছে বলে কথা। তাঁর জন্য সব আইন শিথিল হয়ে যাবে, বলাই বাহুল্য। তিনি নাম কে ওয়াস্তে কোর্সওয়ার্কের পরীক্ষা দিলেন। হাজিরা সংক্রান্ত নিয়ম মানার তো কোনও প্রশ্নই নেই। কতদূর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি কেমন খাতা জমা দিয়েছিলেন। এখন সেই খাতা পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে, হাতের লেখাটা তাঁর কিনা।
এরপর থিসিস সাবমিট। প্রথমে হাতে লিখে প্রি সাবমিশনের ইন্টারভিউ। সেখানে অনুমোদিত হলে, মানে সেই পরীক্ষায় উতরে গেলে চূড়ান্ত থিসিস কম্পোজ করে জমা করার কথা। সেই থিসিস বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়ার কথা। তাঁরা পড়ে সন্তুষ্ট হলে ইন্টারভিউয়ের দিন ধার্য হয়। একদল বিশেষজ্ঞর সামনে ইন্টারভিউ দিতে হয়।
এর কটা মানা হয়েছে? থিসিস যে অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনকী প্রি সাবমিশনে যে হাতে লিখে জমা দিতে হয়, নিশ্চিত থাকতে পারেন, সেই হাতের লেখাটাও পার্থ চ্যাটার্জির ছিল না। কারণ, পাতার পর পাতা লেখার মতো সময় বা ধৈর্য কোনওটাই তাঁর ছিল না। সেই বিষয়টিই আরও পরিষ্কার হল যখন দেখা গেল একের পর এক রহস্যজনক নিয়োগ হল। যিনি গাইড, তিনি বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে গেলেন। যিনি লিখে দিয়েছেন, তাঁরও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয়ে গেল।
এগুলোর কোনওটাই খুব গোপন তথ্য নয়। শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকলেই জানেন। কই, এটা নিয়ে তো কাউকেই তেমন ধিক্কার দিতে দেখা যায়নি। দিনের পর দিন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে, হোর্ডিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী নিজেকে ডক্টরেট বলে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। কাউকেই তো তেমন সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। মিডিয়াও তো সেভাবে সোচ্চার হয়নি। ডিগ্রির নামে এমন নির্লজ্জ ডাকাতির কথা মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না?
দোষটা কি একা পার্থ চ্যাটার্জির। এতদিন যাঁরা এতবড় ডাকাতির কথা জেনেও নীরব থেকেছি, তাঁদের নয়! এখন দায় ঝেড়ে ফেলা খুব সহজ। এখন তাঁকে একা কাঠগড়ায় তোলা খুব সহজ। কিন্তু তাই এখন যাঁরা সোচ্চার হতে চাইছেন, আঙুলটা বরং আগে তাঁদের দিকেই তোলা উচিত। এতদিন এই লোকগুলিই দাক্ষিণ্য আর ছিঁটেফোটার আশায় দাঁত কেলিয়েছেন, তোল্লাই দিয়ে গেছেন। তাই এখন তাঁদের প্রতিবাদের আর কোনও মূল্য নেই।