এতই যদি জানতেন, আগে বলেননি কেন?‌

রক্তিম মিত্র

হঠাৎ একজন বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আর বিভিন্ন চ্যানেলও প্রাইম টাইমে তাঁর সাক্ষাৎকার দেখিয়ে চলেছে। সমাজ মাধ্যমে সেইসব লিঙ্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাঙালি সেগুলো শুনছে না বলে গিলছে বলাই ভাল।

তিনি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নাকি শিক্ষাবিদ। অন্তত সেভাবেই নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন। কথাটা গুছিয়ে বলেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর চালচলন বা আচার ব্যবহারে শিক্ষার তেমন ছাপ পাই না। অন্তত আমার কোনওকালেই তাঁকে ভাল লাগে না। কেন লাগে না, তার বিশদ ব্যাখ্যায় নাই বা গেলাম।

তিনি হঠাৎ করে আসরে নেমেছেন। পার্থ চ্যাটার্জি কতটা দুর্নীতিগ্রস্থ, তিনি সব আগে থেকে জানতেন, প্রমাণ করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছেন। অন্তত তিনটি চ্যানেলে তাঁর একই কথার চর্বিত চর্বন শোনা গেল। শিরোনাম, বিস্ফোরক বৈশাখী। আসলে, যত্রতত্র এত অকারণে ‘‌বিস্ফোরণ’‌, ‘‌বিস্ফোরক’‌ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়, মাঝে মাঝে এই শব্দদুটো হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়।

একটা প্রশ্ন শুরুতেই করতে ইচ্ছে করছে, এতই যদি জানতেন, আগে বলেননি কেন?‌ এমন নয় যে টিভিতে আপনি পরিসর পাননি। গত কয়েক বছরে টিভির পর্দা আপনাকে যতবার দেখিয়েছে, সারা জীবনে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে এতবার দেখায়নি। বুভুক্ষু বাঙালি আপনার কথা যত না শুনেছে, নেতাজি বা রবীন্দ্রনাথের কথা এত শোনেনি। কখনও আপনি তৃণমূল, কখনও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। কখনও বিজেপি, কখনও বিক্ষুব্ধ বিজেপি। কখনও না তৃণমূল, না বিজেপি হয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডে। কখনও ইট পেতে রাখা দাক্ষিণ্যপ্রত্যাশী। অর্থাৎ, না জীবন না রাজনৈতিক জীবন, কোথাও কোনও স্থিরতা নেই। ভাগ্যিস একটা শোভন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন, নইলে কে চিনত আপনাকে!‌ এই সহজ সত্যিটাই মাঝে মাঝে ভুলে যান।

এতদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠলে দু ঘটি জল বেশি খেতেন। কত গোপন বৈঠকই না হয়েছে। আর এখন আপনার কথা শুনলে মনে হবে, পার্থ চ্যাটার্জির মতো খারাপ লোক আর দুটি নেই। যত দুর্নীতি, আপনি নাকি তার অধিকাংশই জানতেন। কই, এতদিন তো এইসব কথা শোনা যায়নি। যেখানে জানানোর, সেখানেও জানিয়েছেন বলে মনে হয় না। সকাল–‌বিকেল যাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলায়, তাঁর কাছেও সততার ভাষণ শুনতে হচ্ছে, এর থেকে বড় পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে!‌

বেশ, আগে না হয় বলেননি। এত এত টাকা উদ্ধারের পরেও তো চার–‌পাঁচদিন পেরিয়ে গেছে। তখনও তো বলতে শোনা যায়নি। আসলে, অপেক্ষা করছিলেন, জল মাপছিলেন। দেখতে চাইছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন। তিনি যেন দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন, অমনি আপনার বিবেকও জেগে উঠল। এমন ভান করছেন, যেন আর কেউ কিছু জানতেন না, সব পার্থ চ্যাটার্জি একা করেছেন। আর কিছু বশংবদ অফিসার ছিলেন।

যদি এতই জানেন, তাহলে এটুকু জানেন না, সেই নজরানা কোথায় কোথায় যায়!‌ লোকসভা ভোটের আগে গঙ্গাকুটিরে যে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন, তার আসল পান্ডা কে, জানেন না!‌ এখন নিশ্চুপ কেন?‌ ক্ষমতা থাকে তো বলুন না তাঁর বিরুদ্ধে!‌ এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বাস দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে কেন এগিয়ে দেওয়া হয়!‌ তিনি আশ্বাস দেওয়ার কে!‌ এই প্রশ্ন তুলুন তো।

এখন পার্থ চ্যাটার্জির সমালোচনা করা খুব সোজা। এর জন্য কোনও বাহাদুরি লাগে না। বরং, প্রতিবাদের ধ্বজা উড়িয়ে অন্য কাউকে তুষ্ট করে চলাটা আরও বেশি অন্যায়। পার্থর অপরাধ চেনা যায়, বোঝা যায়। ধিক্কার দেওয়া যায়। কিন্তু এইসব দ্বিচারিদের দেখলে আরও বেশি রাগ হয়। এই সময় এঁদের চিনে নেওয়া আরও বেশি জরুরি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.