একটি ব্রেকিং নিউজ ও অসহায় এক মুখপাত্র

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন:‌ টিভিতে তখন চলছিল সান্ধ্যকালীন আলোচনা। প্যানেলে ছিলেন বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা ও একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। হঠাৎ করেই ব্রেকিং নিউজ। উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ–‌র প্রার্থী জগদীপ ধনকড়।

এমন ব্রেকিং নিউজ এলে যা হয়!‌ যে বিষয়ে আলোচনা চলছিল, সেই বিষয় থামিয়ে নতুন বিষয় নিয়েই চর্চা শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও সঞ্চালক সেটাই করলেন। বিভিন্ন প্যানেলিস্টের কাছেই প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন।

এমন ক্ষেত্রে কী হয়!‌ যাঁরা শাসক দলের, তাঁরা বলবেন, এটা একটা মাস্টারস্ট্রোক। যাঁরা বিরোধী, তাঁরা বলবেন, শাসকদলের কে প্রার্থী সেটা আমরা দেখছি না, আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব। আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের মতো করে প্রার্থী নির্বাচন করব।

আর প্রার্থীর নাম যখন জগদীপ ধনকড়, তখন তৃণমূলের পক্ষ থেকে আপত্তি আসবে, সেটাই খুব স্বাভাবিক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মাঝারি মানের নেতারাও সুযোগ পেলেই আক্রমণ করে গেছেন রাজ্যপালকে। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বলা যেতেই পারত, এই মানুষটির যা ভূমিকা, আমরা কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আমরা বিরোধীদের পক্ষ থেকে সম্মিলিত প্রার্থী দেব।

সেদিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে আলোচনায় ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁকে সত্যিই বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। স্বাগত জানাবেন নাকি বিরোধিতা করবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। স্টুডিও থেকেই এঁকে–‌তাঁকে ফোন করে চলেছেন। দলের স্ট্যান্ড কী?‌ কী বলব?‌ নিশ্চয় জানতে চাইছিলেন।

সেদিন ঠিক কাকে ফোন করছিলেন?‌ নিশ্চিতভাবেই মমতা ব্যানার্জিকে নয়। এত সাহস তাঁর নেই। এমনকী ভাইপো অভিষেককেও নয়। তাঁকে ফোনে ধরাও এত সহজ নয়। হতে পারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। হতে পারে সুব্রত বক্সিকে। হতে পারে কুণাল ঘোষকে।

কিন্তু হায়!‌ এঁরা কেউই বলার জায়গায় নেই। নেত্রীর মনোভাব না জানলে এঁরাই বা কী বলবেন?‌ বেচারা শান্তনুবাবু পড়লেন মহা বিপদে। কী করা যায়?‌ কী বলা যায়?‌ সত্যিই যেন কপালে ঘাম দিচ্ছিল। কী বলে মানরক্ষা করবেন?‌

তারপর এসব ক্ষেত্রে সামাল দিতে যা বলতে হয়, সেটাই বললেন, ‘‌আমরা এখন একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দলনেত্রী এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তখন বলতে পারব আমরা কী করব।’‌

বোঝা গেল?‌ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেব, এটুকুও আগ বাড়িয়ে বলার জায়গায় নেই। যাঁরা এতদিন ধরে নিরন্তর গালাগাল দিয়ে এলেন, তাঁরাও বলতে পারছেন না তাঁর বিপক্ষে ভোট দেব। যদি কোনও কংগ্রেস বা বামেদের প্রতিনিধি থাকতেন, তিনি অন্তত এটুকু বলতে পারতেন, বিজেপির প্রার্থীকে সমর্থনের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আমাদের মতো করে প্রার্থী দেব। তারপর ভোটে যা হওয়ার হবে।

এই স্পষ্টতাটুকু অন্যান্য দল দেখাতে পারে। কিন্তু তৃণমূলের প্রতিনিধির এটুকুও বলার এক্তিয়ার নেই। আসলে, নেত্রীর কখন কী ইচ্ছে হয়, সেটা তাঁরাও জানেন না।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.