সস্তা নাটকের অভ্যেসটা এখনও যাচ্ছে না

অজয় নন্দী

এক একটা চেয়ারের একেকটা ওজন আছে। অনেকেই সেই চেয়ারের মূল্য বোঝেন না। সেই চেয়ারের ওজন বোঝেন না। তাই আগে যেমন সস্তা নাটক করতেন, এখনও সেই সস্তা নাটকই চালিয়ে যান। এই তালিকায় সব জগতের লোকই আছেন।

এবারের লেখা মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তকে নিয়ে। দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন আহ্বায়ক। পরে হলেন অর্থসচিব। তখনও কারণে অকারণে খবরে থাকার অদ্ভুত একটা নেশা ছিল। খবরে থাকার জন্য অহেতুক ঝগড়া করতেন। যেটা সহজেই আজ বলা যায়, সেটা চমক দেবেন বলে দশদিন পরে বলতেন। চমক দিতে দিতে নিজেকে মাঝে মাঝেই হাস্যাস্পদ করেছেন।

অঞ্জন মিত্রের মৃত্যুর পর ভেবেছিলেন তিনিই সচিব হবেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। প্রথমে হলেন টুটু বসু, পরে সৃঞ্জয় বসু। সৃঞ্জয় সরে দাঁড়াতেই এবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সচিবের ফাঁকা চেয়ারে বসে পড়লেন। ফাঁকা চেয়ারই বলা যায়। কারণ, এবার ক্লাবে নির্বাচনই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর গুণধর ভাই বাবুন ব্যানার্জির সঙ্গে রফা করে নিয়েছেন। বিনা লড়াইয়েই জয়ী।

কিন্তু ক্লাবের সভাপতি কে হবেন?‌ নিয়ম অনুযায়ী, সভাপতি পদে নির্বাচন হয় না। কর্মসমিতি সভাপতিকে নির্বাচন করে। শুরু থেকেই নানা অঙ্ক, নানা সমীকরণ, নানা জটিলতা। কখনও শোনা গেল, সঞ্জীব গোয়েঙ্কার নাম। কখনও শোনা গেল ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নাম। শেষমেশ সেই টুটু বসু। কোনও সন্দেহ নেই, বছরের পর বছর এই টুটুবাবুই নিজের পকেটের টাকায় ক্লাব চালিয়ে এসেছেন। তাই তাঁকে সভাপতি করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। বরং তিনিই অটোমেটিক চয়েস।

তাহলে এতদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা হল কেন?‌ একের পর এক মিটিং করতে হল কেন?‌ সত্যিই যদি টুটু বাবুকে সভাপতি হিসেবে চাইতেন, প্রথম মিটিংয়েই তো সর্বসম্মতিতে পাস হয়ে যেত। কোনও দিক থেকে কোনও বাধাই আসত না। তাহলে, এতদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা হল কেন?‌

দুটি কারণ থাকতে পারে। এক, অন্য কয়েকজনকে একটু বাজিয়ে দেখা। দুই, সভাপতি নির্বাচন তাঁর হাতে, এটা হাবেভাবে বোঝানো। তিন, শুরুতেই যদি টুটুবাবুকে বেছে নেওয়া হয়, তাহলে জল্পনা তৈরি হবে না। আর জল্পনা না থাকলে খবরে ভেসে থাকা যাবে না। চার, হয়ত বোঝাতে চাইলেন, সভাপতি পদটা নেহাতই আলঙ্কারিক। আসলে, সচিবই সব। কে সভাপতি হবেন, এটা সচিবই ঠিক করবেন।

নতুন সচিব বছরের পর বছর মিডিয়া জগতকে অনেক খোরাক দিয়ে গেছেন। অকারণে জলঘোলা করেছেন। শুধুমাত্র খবর হওয়ার জন্য জট পাকিয়েছেন। এখনও সেই অভ্যেসটা ছাড়তে পারছেন না। টুটু বাবুর মতো মানুষকে এতদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা হল, এতে কি টুটুবাবুর সম্মান বাড়ল?‌ যে নামটা অটোমেটিক চয়েস, সেই নামটা নিয়ে এতদিন টালবাহানার কী মানে হয়?‌

যখন মাঝারি মানের কর্তা ছিলেন, তখন খবরে আসার জন্য অল্প বিস্তর হ্যাংলামি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু মোহনবাগানের সচিব হয়েও যদি কেউ সেই পুরনো সস্তা নাটক চালিয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি এই চেয়ারের মর্মই বোঝেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.