সবুজ সরখেল
সেই আটের দশক। শ্রীলঙ্কায় দুজন রত্নায়েক ক্রিকেটার ছিলেন। রবি রত্নায়েক ও রুমেশ রত্নায়েক। ছোট বেলায় জানতাম, তাঁরা দুই ভাই। রবি ছিলেন অলরাউন্ডার। ব্যাটেও ওপেন করতেন। বল হাতেও শুরুতেই আসতেন। আর রুমেশ ছিলেন মূলত জোরে বোলার।
কয়েকদিন পর এই রুমেশ রত্নাকর নামটা বারবার উচ্চারিত হতে লাগল। কারণ, তাঁকে আউট করেই কপিলদেব তাঁর ৩০০ উইকেটের মাইলস্টোনে পৌঁছেছিলেন। ৩০০ উইকেট! আজকের দিনে ভাবলে সংখ্যাটা হয়ত কিছুই নয়। কিন্তু তখন তিনশো উইকেট মানে বিরাট এক ব্যাপার। হাতে গোনা কয়েকজন পেয়েছিলেন। হয়ত পাঁচ–ছ জন। ভারত থেকে কেউই এই মাইলস্টোনে পৌঁছতে পারেননি।
কপিল তিনশো উইকেটের মাইলস্টোনে পৌঁছনোর কয়েকমাস যেতে না যেতেই গাভাসকার দশ হাজার রানের এভারেস্টে পৌঁছে গেলেন। একসময় থামলেন ১০১২২ রানে। ওদিকে, কপিল একে একে টপকে যাচ্ছেন অন্যদের। ছয় থেকে পাঁচ। পাঁচ থেকে চার। এভাবেই নয়ের দশকের মাঝামাঝি। সামনে শুধু রিচার্ড হেডলির ৪৩১ উইকেট। সেটাকেও টপকে গিয়ে থামলেন ৪৩৪ উইকেটে।
ততদিনে গাভাসকারকে টপকে গিয়েছেন অ্যালান বর্ডার। শচীন তেন্ডুলকার নামক ব্যাটসম্যান তখনও দশহাজারি ক্লাব থেকে অনেকটাই দূরে। তাই একদিকে গাভাসকারের রেকর্ড যখন ভেঙে গেল, তখন ভারত থেকে শীর্ষে বলতে রইলেন সেই কপিলদেব। কিন্তু কোনও রেকর্ডই কি অক্ষত থাকে? একসময় তাঁকেও টপকে গেলেন ওয়ালস, ম্যাকগ্রাথরা। পরে কুম্বলে, ওয়ার্ন, মুরলিরা তো ছশোর সীমাও ছাপিয়ে গেলেন।
এভাবেই কপিল এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন, এভাবেই একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। তবু এতদিন প্রথম দশে ছিলেন। প্রায় চার দশক ধরে প্রথম দশে থাকা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু নিঃশব্দে কপিলকে টপকে গেলেন অস্ট্রেলীয় বোলার নাথান লিয়ন।
আপাতভাবে অস্ট্রেলিয়া দশ উইকেটে হারাল শ্রীলঙ্কাকে। আরও একটু তলিয়ে দেখলে বলা যায়, প্রথম দশে এলেন নাথান লিয়ন। কিন্তু এই দুটো খবরের আড়ালে চাপা পড়ে গেল তার থেকেও বহুগুন ভারী একটা খবর। নাথান লিয়ন তো না হয় দশে এলেন। কিন্তু তিনি দশে আসায় কে দশের বৃত্তের বাইরে চলে গেলেন? সেই নামটা হল কপিলদেব। ব্রেকিং নিউজের ছটপটানিতে কে আর এত তলিয়ে ভাবতে যায়? তাই এতবড় একটা বিষয় চাপাই পড়ে গেল। কী জানি, কপিল নিজেও হয়ত এখনও জানেন না।