মমতা যদি এমন তাস ফেলতেন!‌

উত্তম জানা

দিল্লিতে একের পর এক বিরোধী জোটের বৈঠক। প্রথমে উঠল শরদ পাওয়ারের নাম। তিনি রাজি হলেন না। পরে এল ফারুক আব্দুল্লার নাম। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে চান। ফলে, তিনিও রাজি হলেন না। এবার গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি আবার সর্বসম্মত প্রার্থী হতে চান। অর্থাৎ, শাসক–‌বিরোধী মিলে যদি তাঁকে প্রস্তাব দেয়, তবে তিনি রাজি। মানে, মোদ্দা কথা, তিনিও সরে পড়লেন। রইলেন সেই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো যশবন্ত সিং।

কিন্তু একটু পূর্ব পরিকল্পনা থাকলেই শাসক শিবিরকে চাপে ফেলে দেওয়া যেত। আর সেটা পারতেন মমতা ব্যানার্জি। ধরা যাক, তিনি চুপি চুপি গেলেন লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে। আগেরবার অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন আদবানি হয়ত রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। কিন্তু মোদি–‌অমিত শাহ জুটি আদবানিকে করতে চাননি। ভাসিয়ে দেওয়া হল রামনাথ কোবিন্দের নাম। নিশ্চিতভাবেই আদবানি খুব আশাহত হয়েছিলেন। অন্তত শেষ বয়সে মোদি কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা দেখাবেন, এমন আশা করাটাই স্বাভাবিক।

এবারও কি আদবানি?‌ মানছি, বয়স হয়েছে। আগের মতো সক্রিয় নেই। তবু রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষেত্রে বয়সটা বিরাট কোনও ফ্যাক্টর নয়। বিজেপি চাইলে আদাবনিকে রাষ্ট্রপতি করতেই পারত। কিন্তু সেটা তারা করবে না, এটাও জানা কথা। এই অবস্থায় আদবানির কাছে গিয়ে মমতা যদি প্রস্তাব দিতেন, ‘বিজেপি কখনই আপনাকে রাষ্ট্রপতি করবে না। কিন্তু আমরা চাই, আপনি রাষ্ট্রপতি হোন। ‌আপনাকে প্রার্থী হতে হবে। বিরোধীদের প্রার্থী নয়। আপনি সর্বসম্মত প্রার্থী হবেন। আপনি রাষ্ট্রপতি হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি আমার ওপর ছেড়ে দিন।’‌

কোনওভাবে আদবানির সঙ্গে এই প্রাথমিক কথার পর ধরা যাক মমতা প্রেস কনফারেন্স করলেন, ‘‌রাষ্ট্রপতি পদে সঙ্কীর্ণ দলীয় লড়াই কাম্য নয়। এই পদটা সবকিছুই ঊর্ধ্বে থাকাই ভাল। বিজেপি যেহেতু সরকারে, তাদের যেহেতু গরিষ্ঠতা আছে, তাই এ ব্যাপারে তাদের মতামত অগ্রাধিকার পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমরা চাই, লালকৃষ্ণ আদবানিকে সর্বসম্মত প্রার্থী করা হোক। তাঁকে যদি বিজেপি প্রার্থী করে, আদবানিজির সম্মানে আমরা কোনও পাল্টা প্রার্থী দেব না।’‌ এইমুহূর্তে বিরোধীদের যে ছত্রভঙ্গ অবস্থা, অনেক ছোট দল হয়ত মমতার এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেত। এমনকী কৌশলগত কারণে কংগ্রেসও হয়ত এমনটাই চাইত। দু এক জায়গা থেকে ক্ষীণ বিরোধিতা হয়ত আসত। কিন্তু সেগুলো তেমন জোরালো নয়।

একবার যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আদবানির নাম ঘোষণা করে দিতেন, তাহলে সত্যিই চাপে পড়ে যেতেন মোদি অমিত শাহরা। তখন তাঁরা কী করবেন, সত্যিই ভেবে পেতেন না। বাধ্য হয়েই এই নামটা গিলতে হত। নৈতিক জয় হত মমতারই। কেন যে মমতা এই তাসটা ফেললেন না!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.