রক্তিম মিত্র
এই স্পিকারকে যত দেখি, ততই অবাক হই। ফের তিনি নতুন এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন। আবার পালবিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানের পদে বসিয়ে দিলেন এক দলবদলু বিধায়ককে। এতদিন জানতাম, এইপদটা বিরোধীদেরই দেওয়া হয়। গত কয়েক বছররে ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে, এটা বোধ হয় দলবদলুদের জন্যই সংরক্ষিত।
এই ট্র্যাডিশন শুরু হয়েছিল মানস ভুঁইয়াকে দিয়ে। এই তালিকার নবতম সংযোজন কৃষ্ণ কল্যাণী। এই কীর্তিমান রায়গঞ্জ থেকে জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। বাকিদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নাম লেখালেন তৃণমূলে। পুনর্বাসন হল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে।
এই স্পিকারের আমলে দলবদলটা নির্লজ্জতার সব সীমাই ছাড়িয়ে গেছে। কী অবলীলায় এক দলের টিকিটে জেতা বিধায়ক অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন। গত দশ বছরে সংখ্যাটা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। একটি ক্ষেত্রেও কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়নি। স্পিকার মশাই যথারীতি টালবাহানা চালিয়ে গেছেন। তারিখের পর তারিখ। শুনানির পর শুনানি। কার্যক্ষেত্রে অষ্টরম্ভা। দলবদলুরাও চরম নিশ্চিন্ত। তাঁরা জানেন, শাসক শিবিরে ভিড়ে গেলে তাঁদের কিচ্ছু হবে না।
কিন্তু এই দলবদলুদের পুরস্কৃত করে পিএ কমিটির চেয়ারম্যান করা খুব জরুরি? এই পদটার মূ্ল্য বোঝেন? সরকারি আয়ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা। আমলাদের তৈরি করা রিপোর্টের মধ্যে থেকে ফাঁক ফোকর বের করতে গেলে একটু লেখাপড়া, একটু বিদ্যেবুদ্ধি লাগে বইকি। শঙ্কর সিং, মুকুল রায় বা কৃষ্ণ কল্যাণীর সেই লেখাপড়া বা সেই বিদ্যেবুদ্ধি আছে তো?
প্রথা হল, কমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকে একজনকে চেয়ারম্যান করতে হবে। কোন দল থেকে কে সদস্য হবেন, সাধারণভাবে তা সেই দল ঠিক করে। কিন্তু এখানে কৃষ্ণ কল্যাণীর নাম এল কীভাবে? বিজেপি তো তাঁর নাম দেয়নি। তাহলে কে তাঁর নাম ঢোকালেন? স্পিকার মশাই নিজের এক্তিয়ারেই এই নাম ঢুকিয়েছেন। এতজন বিধায়কের মধ্যে এই নামটাই তাঁর যোগ্যতম মনে হল ? এমন একজন দলবদলুর জন্য বিশেষ এক্তিয়ার প্রয়োগ করতে হল? অশোক লাহিড়ীর মতো একজন অর্থনীতিবিদ এই কমিটির সদস্য। অথচ, স্পিকারমশাই নিজের এক্তিয়ার প্রয়োগ করে চেয়ারম্যান করলেন এমন একজনকে যিনি এক পাতা ইংরাজি পড়তে পারেন কিনা সন্দেহ।
স্পিকার মশাইয়ের নিশ্চয় কিছু এক্তিয়ার আছে। কিন্তু বারবার ভুলভাল লোকের জন্য নিজের এক্তিয়ার প্রয়োগ করতে হয় কেন? তাঁর দাবি, বাইরে কী হচ্ছে, আমি জানি না। বিধানসভার ভেতর তিনি বিজেপিরই বিধায়ক। যাঁরা রাজনীতি নিয়ে সামান্য খোঁজখবরও রাখেন, তাঁদের অধিকাংশই জানেন, কৃষ্ণ কল্যাণী দল বদল করে কোন শিবিরে গেছেন। জানেন না শুধু স্পিকার মশাই। অসত্য বলতে বলতে নিজের চেয়ারকে কোথায় নামাচ্ছেন!
স্পিকার মশাই মাঝে মাঝেই বলেন, বিরোধীরা নাকি তাঁকে সম্মান করছেন না। বিরোধীরা নাকি সভার মর্যাদা হানি করছেন। তিনি একাই নিজের চেয়ারকে কলঙ্কিত করার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। তিনি যতদিন এই চেয়ারে আছেন, ততদিন তাঁর চেয়ারকে অসম্মান করার জন্য অন্য কারও দরকার পড়বে না। তিনি নিজেই যথেষ্ট।