নরেশবাবুর প্রমাণ লোপাট

স্বরূপ গোস্বামী

 

নরেশবাবু পড়েছেন মহা সমস্যায়।

 

এই বয়সে এসে যে এমন সমস্যায় পড়তে হবে, সত্যিই ভাবেননি। ভাববেনই বা কী করে!‌ এমন বেআক্কেলে প্রতিবেশী জুটে যাবে, কে জানত!‌

 

অথচ, এই চন্দ্রনাথবাবুর সম্পর্কে কত উচ্চ ধারণাই না ছিল। বিলেত ফেরত ডাক্তার। নামী মানুষ। এমন লোক পাশের ঘরে এসেছেন শুনে বেশ খুশিই হয়েছিলেন নরেশবাবু। যাক, পাশের ঘরে একজন ডাক্তার এলেন। বিপদে–‌আপদে পরামর্শ পাওয়া যাবে। এই ডাক্তারের নিশ্চয় অনেক চেনাশোনাও থাকবে। প্রয়োজনে চন্দ্রনাথবাবুর রেফারেন্স নিয়ে তাঁদের কাছেও যাওয়া যাবে। কিন্তু কোথায় বা কী?‌ স্বয়ং চন্দ্রনাথবাবুই যে এমন বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন, কে জানত!‌

 

আমাদের এই নরেশবাবু, মানে নরেশ অধিকারীও বেশ মান্যিগন্যি মানুষ। একসময় স্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন। সে কারণে অবশ্য বিখ্যাত নন। তাঁর খ্যাতি কিছুটা অন্য কারণে। সেটা না হয় গৌণই থাক। তিনি থাকেন উত্তরবঙ্গে। কিন্তু ‘‌বিশেষ কাজে’‌ মাঝে মাঝেই আসতে হয় কলকাতায়।

 

চন্দ্রনাথবাবু বিলেত ফেরত ডাক্তার, সে তো জানাই আছে। স্ত্রীও ডাক্তার। মেয়ে থাকে বিদেশে। এখন মার্কিন পাত্রকে বিয়ে করে সেখানকারই নাগরিক। চন্দ্রনাথবাবুও আদতে জেলার মানুষ। তাঁকেও সেই ‘‌বিশেষ কাজে’‌ই আসতে হয় কলকাতায়।

 

নরেশবাবু যে আস্তানায় ওঠেন, চন্দ্রনাথবাবুও ওঠেন ঠিক সেই আস্তানাতেই। একেবারে পাশের ঘরেই। সেই আস্তানা অনেকটা স্কুল বাড়ির মতো। সামনে লম্বা বারান্দা। পরপর অনেকগুলো ঘর। নরেশবাবু আর চন্দ্রনাথবাবুর দুটো দরজা একেবারে পাশাপাশি। দুই দরজাতেই বাইরে তালাচাবির ব্যাপার নেই। টেনে দিলেই বন্ধ হয়ে যায়। চাবি দিয়ে খুলতে হয়। ফলে, ভেতরে কেউ আছে কিনা, বাইরে থেকে ঝট করে বোঝার তেমন উপায় নেই।

 

কোনও ঘরেই রান্নাবান্নার তেমন ব্যাপার নেই। ফ্যামিলির লোকেরাও সচরাচর থাকে না। খাওয়া–‌দাওয়া বলতে নিচে ক্যান্টিন। সেখানে গিয়েও খাওয়া যায়। আবার ইন্টারকমে বললে ঘরে পৌঁছেও দিয়ে যায়। সকাল–‌বিকেল চা–‌টোস্ট যেমন আসে, তেমনি রাতের দিকে ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ, চিকেন–‌এসবও আসে। নরেশবাবু গ্রামের মানুষ। ফোনে অর্ডার দেওয়া কিছুটা বিলাসিতাই মনে করেন। তিনি লুঙ্গি পরে নিচে গিয়েই খেয়ে আসেন। অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়ে যায়। টুকটাক গল্পও হয়। চন্দ্রবাবু সাহেব মানুষ। তিনি আবার নিচে সচরাচর নামেন না। একটু গম্ভীর। একা থাকতেই পছন্দ করেন। ওপরেই অর্ডার করেন।

 

****

 

এইভাবে বেশ চলছিল। মাঝে মাঝেই লিফটে বা বারান্দায় চন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা হয়। মৃদু হাসি বিনিময় হয়। গুডমর্নিং–‌গুড ইভিনিং হয়। কিন্তু জমিয়ে আলাপটা হয়ে ওঠেনি। নরেশবাবু মাঝে মাঝেই ভাবেন, আলাপ করে আসবেন। কিন্তু নানা সঙ্কোচে গুটিয়ে যান। এত গম্ভীর মানুষ, যদি বিরক্ত হন!‌

 

একমাস যেতে না যেতেই একদিন সকালে উঠে নরেশবাবুর চক্ষু চড়কগাছ। বারান্দায় বিলেতি সুরার বোতল। তার মানে, এটা চন্দ্রবাবুই রেখেছেন। ডাক্তার মানুষ, এত বছর বিলেতে ছিলেন। একটু আধটু খেতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে বোতলটা এভাবে কেউ বাইরে নামিয়ে রাখে!‌ লোকে কী ভাববে?‌

 

পরদিন সকালে আবার সেই এক দৃশ্য। বাইরে যথারীতি বোতল নামানো। সঙ্গে চিকেনের হাড়, চিপসের প্যাকেট। এ তো মহা বিপদ। গতকাল পর্যন্ত নরেশবাবু ভেবেছিলেন, চন্দ্রবাবুকে লোকে কী ভাববে?‌ আজ সকালে যেন ভাবনাটা বদলে গেল। ভাবতে লাগলেন, বারান্দায় দুটো দরজার মাঝে এই নমুনাগুলি নামানো আছে। তার মানে লোকে তো ভাবতে পারে, এগুলো নরেশবাবুই এই কারণসুধা সেবন করেছেন। ছি ছি। তাঁর সম্পর্কে লোকে কী ভাববে!‌

 

তাহলে উপায়?‌ নরেশবাবু এদিক ওদিক তাকালেন। নিজের ঘর থেকে একটা খবরের কাগজ আর পলিথিন আনলেন। সেই বোতল, চিপসের প্যাকেট, মাংসের হাড় কুড়িয়ে খবরের কাগজে মুড়লেন। ক্যারি ব্যাগে ভরে এদিক ওদিক তাকালেন। কাছেই একটা ডাস্টবিন ছিল। থমকে দাঁড়ালেন। পরে মনে হল, এখানে ফেলা ঠিক হবে না। যে পরিষ্কার করবে, সে ভাবতে পারে নরেশবাবুও খেতে পারেন। তার থেকে দূরের ওই ডাস্টবিনে ফেলা ভাল। তাহলে অন্তত নরেশবাবুকে কেউ সন্দেহ করবে না। অতএব, নরেশবাবু চললেন দূরের ডাস্টবিনে।

 

সেই রাতেই উত্তরবঙ্গে ফেরার টিকিট কাটা ছিল নরেশবাবুর। সন্ধের মধ্যে কলকাতার সব কাজ চুকিয়েও ফেলেছিলেন। কিন্তু কী মনে হল, চন্দ্রবাবুর ঘরের দিকে উকি মারলেন। দরজা বন্ধ। কিন্তু বাথরুমের আলো জ্বলছে। তার মানে, চন্দ্রবাবু বাড়ি যাননি। আজকেও থাকবেন। তাহলে সকালে নিশ্চয় সেই নমুনা পড়ে থাকবে। লোকে কী ভাববে?‌

 

অতএব, যাওয়া বাতিল। নরেশবাবু ঠিক করেই নিলেন, সকালে মহান কাজটি করে পরদিন রাতের ট্রেনে বাড়ি যাবেন। সারারাত ঘুমোলেন বেশ আতঙ্ক নিয়েই। ভোরেই উঠতে হবে। প্রমাণ লোপাট করতেই হবে। উঠে পড়লেন ভোর পাঁচটায়। দেখলেন, দরজার বাইরে কিছু পড়ে নেই। কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। মনে হল, উঠেই যখন পড়েছেন, একটু হেঁটে আসা যাক। অনেকদিন পর একা একা ময়দানে হাঁটতে বেশ ভালই লাগল। বেশ একটা ফুরফুরে হাওয়া। কতদিন এই দিকটায় আসা হয় না। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খচখচানি থেকেই গেল। তার মানে কি চন্দ্রবাবু রাতের ট্রেনে বাড়ি চলে গেছেন!‌ তাই হয়ত সন্ধাহ্নিক করেননি।

 

সত্যিই তো। চন্দ্রবাবুর ভয়ে তিনি যাওয়া ক্যান্সেল করলেন। অথচ, চন্দ্রবাবু বেমালুম চলে গেলেন।

 

কিন্তু পরের সপ্তাহে তো চন্দ্রবাবু আবার আসবেন। কবে আসবেন, কে জানে!‌ তাহলে উপায়?‌ নরেশবাবুকেও লোকজন এত খাতির করে। তাঁকে কিনা ভোর বেলায় উঠে প্রমাণ লোপাট করে যেতে হবে!‌  এটা কোনও কাজ হল!‌ একজন খেয়ে অবলীলায় খেয়ে যাবে, আরেকজন পরিষ্কার করে যাবে!‌ আবার তিনি না সরালেও মুশকিল। সুইপার আসে সেই সকাল সাড়ে আটটা–‌নটায়। তার আগে পর্যন্ত ওইসব জিনিস পড়েই থাকবে। লোকে কী ভাববে!‌ কিছু একটা বিহিত করতেই হবে।

 

উপায় একটা বেরোলো। ক্যান্টিনেই থাকে গোপাল। খুব ভাল ছেলে। নরেশবাবুকে বেশ ভক্তি করে। দেখলেই স্যার স্যার করে। নিচে গেলে মাছের বড় পিসটা নরেশবাবুর জন্য নিয়ে আসে। একদিন তাকে নিজের ঘরে ডাকলেন। বললেন, গোপাল, তোকে আমার হয়ে একটা কাজ করতে হবে।

 

—বলুন স্যার।

— আমার পাশের ঘরে থাকেন ওই চন্দ্রবাবু। চিনিস তো?‌

— হ্যাঁ স্যার। তবে উনি তো গম্ভীর মানুষ। তাছাড়া, খেতে নিচেও নামেন না। তাই খুব একটা কথা বলা হয়নি।

— লোকটা এমনিতে ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হল, রাতের দিকে ড্রিঙ্ক করেন।

— সে তো স্যার অনেকেই করেন। আমরা বুঝতে পারি।

— শোন, তুই তো জানিস, আমি ওসব খাই না। চন্দ্রবাবু খাচ্ছে, খাক। আমার কী?‌ কিন্তু লোকটা বোতলগুলো বাইরে নামিয়ে দিচ্ছে। সকাল বেলায় বাইরে বোতল দেখলে লোকে কী ভাববে বল তো?‌ তুই যদি দেখিস, তোর মনে হবে আমি হয়ত খেয়েছি। কত লোক এই বারান্দা দিয়ে পেরোয়।

—  এটা তো স্যার সত্যিই খুব সমস্যা।

— সেই জন্যই তো তোকে ডাকা। শোন, আমাকে তো বাড়ি যেতে হবে। রোজ রোজ পাহারা দিতে পারব না। আবার চন্দ্রবাবু কবে কলকাতায় আসছেন, কবে বাড়ি যাচ্ছেন, তা জানতেও পারব না। তুই বাবা সকাল সকাল এদিকটায় একবার টহল দিবি। বোতল পড়ে থাকলে কাগজে মুড়ে ওই দূরের ডাস্টবিনে ফেলে দিস।

 

বলেই গোপালের পকেটে পাঁচশো টাকা গুঁজে দিলেন। গোপালও হাসিমুখে বলল, চিন্তা নেই স্যার। আমি ঠিক ব্যবস্থা করে দেব।

 

***

পরের সপ্তাহে আবার হাজির নরেশবাবু। কিন্তু চন্দ্রবাবু এসেছিলেন কিনা কী করে বুঝবেন?‌ ঠিক করলেন, ইন্টারকমে একবার চন্দ্রবাবুর ঘরে রিং করলে কেমন হয়!‌ যদি কেউ ফোন ধরেন, তাহলে তিনি কেটে দেবেন। আর যদি কেউ না ধরেন, তাহলে বোঝা যাবে ঘরে কেউ নেই। রিং হয়ে গেল। কেউ ধরল না। তার মানে, চন্দ্রবাবু নেই। কিন্তু তিনি তো কাল চলে যাবেন। তারপর যদি আসেন!‌ তাই টিকিটটা পরে কাটাই ভাল। এদিকে গোপালকেও পাওয়া গেল না। ফলে, চন্দ্রবাবু মাঝে এসেছিলেন কিনা, গোপাল সকালে টহল দিচ্ছে কিনা, জানা গেল না। খচখচানি একটা থেকেই গেল। পরদিন যথারীতি চন্দ্রবাবু এলেন। নরেশবাবু ঠিক করলেন, থেকে যাবেন। গোপালের ওপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। সকালের সেই মহান কাজটা নিজের হাতেই করে যাবেন। যথারীতি পরদিন সকালে কাগজে মুড়ে সেই প্রমাণ লোপাট।

 

***

বাড়িতে গিয়েও মন পড়ে থাকে সেই কলকাতার আস্তানাতেই। কাউকে না জানিয়ে রিং করেন চন্দ্রবাবুর ঘরের নম্বরে। ইন্টারকম হলেও বাইরে থেকে ডাইরেক্ট কানেক্ট করা যায়। রিং হয়ে গেলে নিশ্চিন্ত থাকেন। যাক, চন্দ্রবাবু নেই। তার মানে, সকালে কিছু ঘটবে না। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ ‘‌হ্যালো’‌ শুনলেন। তার মানে, সকালে আবার.‌.‌। সঙ্গে সঙ্গে ফোন ক্যান্টিনে ফোন করে গোপালকে অ্যালার্ট করতে হবে।

 

কিন্তু এভাবে আর কতদিন?‌ চন্দ্রবাবু নিজের ঘরে বিন্দাস হয়ে সন্ধাহ্নিক করবেন, আর তাঁকে কিনা দুশ্চিন্তায় ঘুম নষ্ট করতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। এবার কলকাতায় গিয়ে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। কিন্তু চন্দ্রবাবুকে একা গিয়ে বলবেন, সেটাও সাহসে কুলোচ্ছে না। তাই কলকাতায় গিয়ে খুলে বললেন সুজয়বাবুকে। সেইসঙ্গে আবদার, প্লিজ একদিন আমার সঙ্গে চলুন। ওই চন্দ্রবাবুকে ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলি।

 

একদিন সন্ধেবেলায় যথারীতি নরেশবাবু আর সুজয়বাবু বেল বাজালেন চন্দ্রবাবুর রুমে। চন্দ্রবাবু দরজা খুললেন। সুজয়বাবু বললেন, আপনার সঙ্গে ভাল করে আলাপ হয়নি। তাই ভাবলাম, একটু আলাপটা করে আসি। চন্দ্রবাবু সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন।

 

একথা–‌সে কথা চলছে। কিন্তু আসল কথাটা পাড়াই যাচ্ছে না। শেষমেষ নরেশবাবুর ইশারায় সুজয়বাবু প্রসঙ্গটা পাড়লেন—

ডাক্তারবাবু, কিছু মনে করবেন না। আপনি যে সন্ধেবেলায় ড্রিঙ্ক.‌.‌.‌।

তাঁকে থামিয়ে দিয়ে চন্দ্রবাবু বলে উঠলেন, ‘‌আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি।’‌ তারপরই উঠে গেলেন। দুজনেই ভাবলেন কাজ হয়েছে। চন্দ্রবাবু হয়ত লজ্জিত।

তারপরেই দু’‌জনের চক্ষু চড়কগাছ। দেখা গেল, চন্দ্রবাবু ফ্রিজ থেকে একটা দামী বোতল আর তিনখানা গ্লাস বের করলেন। তারপর বললেন, আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি। আপনারা প্রথমবার এসেছেন। আর আমি কিনা শুধু মুখে গল্প করছি!‌ আমার নিজেরই অফার করা উচিত ছিল। এক্সট্রিমলি সরি।

 

দুজনেই সমস্বরে বলে উঠলেন, না, না। আমরা এসব খাই না।

— আরে, এতে লজ্জার কী আছে?‌ আপনারা এমন করছেন, যেন বিষ দিচ্ছি। আরে, এতে কিচ্ছু ক্ষতি হয় না। আমি একজন ডাক্তার হিসেবে বলছি।

— না, না। তা নয়। আসলে, আমরা তো পাবলিক লাইফে আছি। অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। লোকে কী ভাববে?‌

— বাঙালির জীবন থেকে এই ছুৎমার্গটা আর গেল না। খাবার জিনিস খাব, লোকে কী ভাববে?‌ লোকে যা ভাববে, ভাবতে দিন। যে ভাববে, সেও দেখুন খাচ্ছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অনেকেই খায়। কিন্তু স্বীকার করে না। আপনাদের স্বয়ং লেনিন কী বলেছেন জানেন!‌ তিনি বলতেন, ওটাই শ্রমিক শ্রেণির সান্ধ্যকালীন বিনোদন। ওটা না খেলে শ্রমিকদের সঙ্গে মিশবে কী করে?‌

— না, মানে বলছিলাম, আপনি যে বাইরে এভাবে বোতল নামিয়ে রাখেন, লোকে তো ভুল বুঝতে পারে।

— ধুর মশাই, রাখুন আপনার লোক। ফাঁকা বোতল বাইরে রাখব না তো কি ফ্রিজে সাজিয়ে রাখব?‌ আর ভুল কেন বুঝবে, বোতল নামানো আছে মানে আমি খেয়েছি। ব্যাস, মিটে গেল। নিজের টাকায় খাচ্ছি মশাই। কে কী ভাবল, বয়েই গেল। আমি তো স্ত্রীর সঙ্গে খাই, মেয়ে–‌জামাইয়ের সঙ্গেও খাই। স্ত্রীকে যখন ভয় পাই না, তখন খামোখা বাইরের লোককে ভয় পেতে যাব কেন?‌

বলেই হো হো করে হেঁসে উঠলেন চন্দ্রবাবু। কী, বলুন ঠিক বলছি কিনা!‌

বেচারা নরেশবাবু। কী বলবেন, কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। দন্ত বিগলিত করে বললেন, ‘‌হ্যাঁ, তা তো ঠিকই।’‌

এদিকে এই দুই নিরামিশাষি সাত্ত্বিক মানুষের জন্য চন্দ্রবাবু ততক্ষণে চা, বাটার টোস্ট অর্ডার করেছেন। ‌একটু পরে ক্যান্টিনের এক ছোকরা এসে চা–‌টোস্ট দিয়েও গেল। বোতল, গ্লাস তখনও টেবিলেই নামানো। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। তার মানে সে ব্যাটাও মনে মনে যা ভাবার ভেবে নিল। ভাবল, চায়ের পই তিনজনের আহ্নিক শুরু হবে। নিশ্চিতভাবে নিচে গিয়ে বাকিদের বলে বেড়াবে। এমন কথা বলার সুযোগ পেলে কেউ ছাড়ে!‌ ভাবমূর্তি বলে আর কিছু রইল না। বেরিয়েই গোপালকে সবটা বলে এই ছোকরার মুখ বন্ধ করতে হবে। বিপদও আছে। এমনিতে হয়ত কাউকেই বলবে না। কিন্তু বারণ করলে হয়ত বেশি করে বলে বেড়াবে।

 

ওদিকে, চন্দ্রবাবু বেশ দুঃখের সঙ্গেই বললেন, যেটা খাওয়াতে চেয়েছিলাম, সেটা তো খেলেন না। নিন, এখন চা–‌ই খান।

মানে মানে চা–‌পর্ব সেরে দু’‌জন উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল।

 

বাইরে আসতেই সুজয়বাবু বললেন, তাহলে কী বুঝলেন? অকাট্য সব যুক্তি।‌ এ লোক শোধরানোর নয়।

অসহায় নরেশবাবু বলে উঠলেন, যাই, কাল আবার ভোরে উঠতে হবে।সব প্রমাণ লোপাট করতে হবে।

 

(‌সমাপ্ত)‌

*****

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.