বেলাশেষের সেই সুরে কোথাও যেন তাল কাটল

রোহিনী সেন

বেলাশেষের পর বেলাশুরু!‌ এ কেমন সিকুয়েল!‌ নামেই তো গন্ডগোল। তবু নন্দিতা–‌শিবপ্রসাদের ছবি বলে কথা। না দেখলেই নয়।

একরাশ প্রত্যাশা নিয়েই যাওয়া। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বেলাশেষে যে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল, তা যেন কিছুটা ধাক্কা খেল বেলাশুরুতে এসে। সেই একই অভিনেতা। প্রায় একই চরিত্র। পটভূমিতে সেই চেনা শান্তিনিকেতন। তবু সেই চেনা সুরটা যেন নেই।

বর্ষীয়ান এক দম্পতি। বিশ্বনাথ ও আরতি। সেই সৌমিত্র আর স্বাতীলেখা। এখানে অবশ্য শুরুতেই ডিভোর্স চেয়ে সাসপেন্স তৈরি করা নয়। আরতি অ্যালাজাইমার্সে ভুগছেন। অনেককিছুই ভুলে যাচ্ছেন। কাউকে চিনতে পারছেন, কাউকে পারছেন না। মাঝে মাঝেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর পরম যত্নে তাঁকে আগলে রেখেছেন বিশ্বনাথ। কখনও চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন। কখনও আয়নার সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। স্ত্রী কখন আনন্দ পান, কখন কষ্ট পান, সবই তাঁর জানা। ছোট ছোট ভাললাগার মুহূর্ত নির্মাণ করে চলেছেন পরম মমতায়।

কিন্তু এ তো শুধু প্রবীণ দম্পতির কাহিনী নয়। শাখাপ্রশাখার মতো ছড়িয়ে আছে অনেক পার্শ্বচরিত্র। তিন মেয়ে, তাদের তিন জামাই। ছেলে ও একরাশ অভিমান নিয়ে চলে যাওয়া বৌমা। নাতি–‌নাতনি। তাদের জীবনের নানা ঘাত–‌প্রতিঘাত। টুকরো টুকরো নানা মুহূর্ত। এরই মাঝে সবচেয়ে সাবলীল অবশ্যই খরাজ মুখার্জি। চিত্রনাট্যই তাঁর চরিত্রে এনে দিয়েছে অন্য এক আমেজ। অভিনয়গুণে সেটাকে আরও অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন খরাজ। গ্ল্যামারের চেয়ে আটপৌরে ঋতুপর্ণা সবসময়ই বেশি আকর্ষণীয়। কিন্তু মুশকিলটা হল, এই সহজ সত্যিটা তিনি নিজেই ভুলে যান। মনামির ন্যাকামি বা সৌরভের রাগ, দুটোই বড় বেশি আরোপিত। তুলনায় শঙ্কর ও ইন্দ্রাণীর চাপা দীর্ঘশ্বাস যেন ভাবিয়ে তোলে। আর অপরাজিতা আঢ্য!‌ এই ছবিতেও বেশ ছাপ ফেলে গেলেন। একের পর এক ছবিতে অপরাজিতাকে সুন্দরভাবে মেলে ধরার সুযোগ দিয়ে চলেছেন শিবু–‌নন্দিতা। অপরাজিতাও সেই আস্থার, সেই ভরসার প্রতি সুবিচার করে চলেছেন।

মমতা আছে। যত্ন আছে। তবু কী যেন নেই। বর্ষীয়ান স্বাতীলেখা একা একা বেরিয়ে পড়ছেন, এ না হয় বোঝা গেল। তাই বলে শহরের সীমা ছাড়িয়ে হেঁটে হেঁটে এতদূর চলে যাবেন, এটা বিশ্বাস করতে কোথায় একটা ধাক্কা লাগে। ফরিদপুরে গিয়ে শুধুমাত্র পুরসভায় গিয়েই এতবছর আগের সেই অতীন্দ্রদাকে খুঁজে পাওয়াটাও কেমন যেন জোর করে উত্তর মেলানোর মতো। ভিসা–‌পাসপোর্ট ছাড়াই একসঙ্গে এতজন দল বেঁধে বাংলাদেশে কীভাবে ঢুকে পড়লেন, সেও হাইলি সাসপিসাস। এত বছর পরেও ফরিদপুরে সেই পুকুরঘাট, সেই নারকেল বাগান একইরকম আছে, এটাও কিছুটা কষ্টকল্পনা। স্মৃতি ফিরিয়ে আনার যেসব দাওয়াই দেখানো হল, সেগুলোও কতটা চিকিৎশাস্ত্র সম্মত আর কতটা সিনেমার চিত্রনাট্য সম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকবেই।

তবে এসব প্রশ্নকে পাশ কাটিয়েও ছবিটা দেখা যায়। ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হওয়া যায়। কারণ, দিনের শেষে বেলাশুরু একসঙ্গে বাঁচার মন্ত্রই দিয়ে যায়, ভালবাসার বার্তাই রেখে যায়।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.