ম্যাঞ্চেস্টার নয়, নবান্ন আর ইমামিই এঁদের ভবিতব্য

সোহম সেন

তু মান ইয়া না মান, ম্যায় তেরা ম্যাহমান।
বোধ হয় নয়ের দশকে কোনও একটা হিন্দি ছবিতে এরকম একটা সংলাপ ছিল। ইস্টবেঙ্গল–‌ইমামি সাম্প্রতিক গাঁটছড়ায় সেই সংলাপটাই যেন আবার মনে পড়ে গেল।

কয়েকদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ইস্টবেঙ্গল। দু’‌তরফেই কথাবার্তা চলছিল। পরিস্থিতি হয়ত সেইদিকেই এগোচ্ছিল। আর এ ব্যাপারে যুক্ত ছিলেন স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলি। দুই তরফের মধ্যস্থতায় বড় ভূমিকা ছিল বাংলার এই আইকনের।

সৌরভ নিজে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য থেকে যতটা সম্ভব দূরেই থেকেছেন। কিন্তু ইডেন ম্যাচের প্রথম দিন একটি অনুষ্ঠানে হঠাৎ ইস্টবেঙ্গলের স্পন্সর সংক্রান্ত প্রশ্ন উড়ে এল। সৌরভ এক–‌দু লাইনে যেটুকু বলার, বললেন। সৌরভ এক লাইন বললেও কাগজে খবর হয়।

এরপর যা হওয়ার, তাই হল। কোনও আগাম কর্মসূচি ছাড়াই হঠাৎ ইস্টবেঙ্গল কর্তার ডাক পড়ল নবান্নে। সেই সঙ্গে জরুরি তলব করা হল ইমামির কর্তাদের। দু’‌পক্ষকে দু’‌পাশে বসিয়ে ‘‌সর্বশক্তিময়ী’‌র নিদান, ওসব ম্যাঞ্চেস্টার–‌ফ্যাঞ্চেস্টার ছাড়। ইমামিই তোমাদের স্পন্সর। আমি ওদের বলে দিয়েছি। এবার তোমরা দু’‌পক্ষ কথা বলে নাও।

স্বয়ং ‘‌সর্বশক্তিময়ী’‌ এমন নিদান দিলে কার ঘাড়ে কটা মাথা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন?‌ বুধবার যে এমন একটি বৈঠক হতে চলেছে, স্বয়ং ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও জানতেন বলে মনে হয় না। হয়ত জানতেন না ইমামি কর্তারাও। কিন্তু কী আর করা যাবে!‌ ‘‌তিনি’‌ ডেকেছেন। না গেলে গর্দান যাবে। তিনি হুকুম দিয়েছেন, অতএব গাঁটছড়াও না বেঁধে উপায় নেই।

ছিল রুমাল, হল বেড়াল। ছিল ম্যাঞ্চেস্টার, হল ইমামি। আর তাতেই কিনা গদগদ লাল–‌হলুদ কর্তারা। কী আর করা যাবে!‌ বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকেও তাঁরা স্পন্সর ধরে আনতে পারেন না। মাথা মুড়িয়ে বসেন কোনও একজনের কাছে। তাঁর বদান্যতায় যদিও বা স্পনসর আসে, সারা বছর ঝগড়াঝাটি আর টোকাঠুকি লেগেই থাকে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে আবার দু’‌পক্ষের নবান্নে ডাক পড়ে। আবার দন্ত বিগলিত করে দু’‌পাশে বসে যান দুই পক্ষ। আবার এক বছরের গাঁটছড়া।

আগেরবছর শ্রীসিমেন্ট মোটেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আর যুক্ত হতে চায়নি। তাঁদের অবস্থা হয়েছিল ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি। কিন্তু কেঁদে পরিত্রাণ পাবেন, তার উপায় কই!‌ তাঁদেরও নানা বাধ্যবাধকতা। তাই ইচ্ছে না থাকলেও ফরমান মেনে নিতে হয়। কিন্তু এভাবে কতদিন?‌ গতবছরই বোঝা গিয়েছিল, এই বিয়ে টেকার নয়। টিকলও না।

কোয়েস বীতশ্রদ্ধ হয়ে ছেড়ে গেছে। শ্রী সিমেন্টের অবস্থাও তাই। এরপরেও লাল হলুদ কর্তারা আত্মসমীক্ষার ধার ধারেন না। কখনও নবান্নে গিয়ে, কখনও ইডেনে গিয়ে এর–‌ওর হাতে পায়ে ধরে স্পনসর ধরে আনার চেষ্টা করেন। এদের নিজেদের মুরোদ কত, গত কয়েকবছরে তা বেশ ভাল করে বোঝা গেছে। আর মাঝে মাঝেই বিবৃতি ছাড়েন, অনেকের সঙ্গেই কথা চলছে। সঠিক সময়ে জানতে পারবেন।

পরে দেখা যায়, পর্বতের মুষিক প্রসব। দাঁত কেলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে পড়েন। তিনি ধমকে–‌চমকে যা নিদান দেন, তাকেই বেদবাক্য বলে মেনে চলে আসেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর অযাচিত সুখ্যাতি গাইতে শুরু করেন। আর তথাকথিত ফ্যান ক্লাবগুলোও হয়েছে তেমনি। দাদাদের নামে ধন্য ধন্য করতে শুরু করেন। ক্লাবের স্পনসর আনতে বারবার নবান্নে ছুটতে হয় কেন, এটা শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গলের কাছে কতটা লজ্জার, এটা ভেবেও দেখেন না।

একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। এই ইস্টবেঙ্গলের জন্য ম্যাঞ্চেস্টার ঠিক মানানসই নয়। এই কুয়োর ব্যাঙদের জন্য ইমামি আর নবান্নই ঠিক আছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.