সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন বিচারপতি

হেমন্ত রায়

একবার নয়, দু’‌বার নয়। বারেবারেই ঘটছে ঘটনাটা। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় গিয়ে আটকে যাচ্ছে ডিভিশন বেঞ্চে। অনেকদিন ধরেই বিষয়টা ভাবাচ্ছিল। শেষমেশ, সেটা সামনে এনে ফেললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

সিঙ্গল বেঞ্চের রায় মাঝে মাঝেই অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। সিঙ্গল বেঞ্চ হয়ত কোনও তদন্তের নির্দেশ দিল। অমনি তড়িঘড়ি ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুনানি হয়েছে। আর সেই রায় কিনা গেছে রাজ্য সরকারের পক্ষে।

বারবার এই জাতীয় ঘটনা ঘটলে সন্দেহ তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। সিঙ্গল বেঞ্চ তো কাউকে ধরে আনতেও বলেনি, বেঁধে আনতেও বলেনি। রায় ঘোষণা করে কারও শাস্তিও দেয়নি। শুধু মাঝে মাঝে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সেই তদন্ত আটকাতে এত তৎপরতা কেন?‌ বাছাই করা বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ কেন?‌ আর কোন যাদুমন্ত্র বলে সেই রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে চলে যাচ্ছে?‌

এমনিতেই আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তো আছেই। তারপর সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের ওপর যদি ঘনঘন স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, তাহলে সেই প্রশ্ন ও সংশয় আরও বাড়ারই কথা। এই সংশয় আরও বাড়িয়ে দেয়, যখন দেখা যায়, অবসর নেওয়ার পরই বিচারপতিদের কোনও না কোনও জায়গায় প্রমোশনাল পোস্টিং হয়ে যাচ্ছে। হয় এটা–‌ওটা কমিটির চেয়ারম্যান। আর নইলে বিচার বিভাগীয় কমিশনের চেয়ারম্যান। তারপর সেই কমিশন বছরের পর বছর চলতে থাকে। তদন্তও হয় না, রিপোর্টও জমা পড়ে না। জমা পড়লেও সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে না।

দেখা যায়, সেসব বিচারপতি সরকারকে বেশিমাত্রায় তোয়াজ করে চলেন, তাঁরাই প্রোমোশনাল পোস্টিংয়ের এই উপঢৌকন পেয়ে থাকেন। কোনও কাজ ছাড়াই অবসরের পর মাসে দু–‌আড়াই লাখের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। এই অনৈতিক কাজ দিনের পর দিন চলছে। আর বিচারপতিরাও এই পোস্টিং পেতে এতটাই লালায়িত যে কোনও চক্ষুলজ্জারও পরোয়া করছেন না। তাই কর্মরত বিচারপতিদের সামনে সেই ললিপপ ঝোলানোর কাজটা চলেই আসছে।

এইসব বিচারপতিদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। বারবার কারা, কোন স্বার্থে সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বদলে দিচ্ছেন, তদন্তে বাধা দিচ্ছেন, সেটা আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার। জেলা কোর্টকে তো আগেই কব্জায় আনা গেছে। হাইকোর্ট তবু মাঝে মাঝে বিবেকের ভূমিকা পালন করত, কিছুটা হলেও স্বস্তি দিত, কিন্তু তাকে প্রভাবিত করার নির্লজ্জ প্রয়াস চলছেই।

এই প্রবণতা যদি চলতে থাকে, তাহলে এইসব বিচারপতিদের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে। প্রশাসন থেকে সংবাদ মাধ্যম আগেই পেটোয়া হয়ে গেছে। এবার বিচারপতিরাও ভেবে দেখুন, তাঁদের নামের আগে এই পেটোয়া শব্দটা জুড়ে গেলে সেটা কতটা অপমানজনক। ধন্যবাদ, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একেবারে সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.