সেই ‘‌জ্যাকিদা’কে সবাই ভুলেই গেল!‌

বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ— আশির দশক। আজকের লেখায় আশির দশকে বাংলা রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্র। এই প্রজন্ম যাঁর কথা সেভাবে জানতেও পারল না। লিখেছেন রাজীব সেনগুপ্ত।।

বাংলার রাজনীতিতে সে এক বর্ণময় চরিত্র। গুগল বা উইকিপিডিয়া খুঁজলে তাঁকে পাওয়া মুশকিল। ছবিও পাবেন বলে মনে হয় না। পেলেও চেনা মুশকিল। আর তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই নামের কিছু ফেসবুক বা টুইটার প্রোফাইলে চোখ পড়ে যাবে। অথচ, ওই শব্দগুলো আবিস্কারের কত আগেই তিনি পৃথিবী ছেড়েছেন।
একধারে জাঁদরেল প্রশাসক। একদিকে খেলাপাগল এক মানুষ। মোহনবাগান অন্তপ্রাণ। ময়দানের লোকজন বলতেন জ্যাকিদা। মুখে সবসময় পাইপ। চেহারায় একেবারেই বেঁটেখাটো। সম্ভবত মন্ত্রিসভার সবচেয়ে খর্বকায় চরিত্র। কিন্তু কী দাপট!‌ জীবনে কত বিতর্কই এসেছে। পরোয়া করেননি। বরং আরও বিতর্ক ডেকে এনেছেন। একবার তো ঊষা উত্থুপের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন। বললেন, ঊষা উত্থুপের গান অপসংস্কৃতি। তাই নিয়ে কত ঝড় বয়ে গেল!‌

jatin babu
জ্যোতি বসু মন্ত্রিসভার পূর্তমন্ত্রী। ব্যক্তিগতভাবেই জ্যোতিবাবুর খুব ঘনিষ্ঠই ছিলেন। কিন্তু সেই জ্যোতিবাবুর সঙ্গেই সাঙ্ঘাতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন। বেঙ্গল ল্যাম্প নিয়ে জ্যাকিবাবুর অভিযোগে তখন উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। রোজ তখন কাগজের শিরোনামে যতীন চক্রবর্তী।
এত শিরোনামে কি মাথা ঘুরে গেল!‌ কী জানি, হতেও পারে। ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু মিডিয়া তাঁকে ততদিনে এমন বিপ্লবী বানিয়ে ফেলেছিল, পিছিয়ে আসার উপায় ছিল না। রেগেমেগে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগই করে বসলেন। তারপরেও কি নিস্তার আছে!‌ মিডিয়ার প্ররোচনা চলছেই। আর তিনিও যেন লাগামছাড়া। রোজ বলে চলেছেন। দলের কাছে এমনই বিড়ম্বনা, শেষমেষ তাঁর দল তাঁকে বহিস্কার করতে বাধ হল।
সাতাত্তর থেকে একানব্বই ঢাকুরিয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে সেখান থেকেই দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেসের সমর্থনে। হারতে হয়েছিল ক্ষিতি গোস্বামীর কাছে। তারপর জড়িয়ে গেলেন তিনবিঘা আন্দোলনের সঙ্গে। একটু একটু করে পৌঁছে গেলেন বিজেপি শিবিরে। যতদূর মনে পড়ে, ৯৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে প্রচারেও ঝড় তুলেছিলেন বিজেপির হয়ে। তারপর বয়সের ভারে আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলেন। নিশব্দে চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে।
তবে একথা মানতেই হবে, আটের দশকের অন্যতম বর্ণময় চরিত্র এই যতীন চক্রবর্তী। অনুশীলন সমিতির ইতিহাস তো আছেই, তারপরেও কত লড়াই, কত ত্যাগস্বীকার। তাঁর আর্থিক সততা নিয়ে কোনওদিন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। জীবনের শেষদিনগুলোও কেটেছে একেবারেই অনাঢ়ম্বরভাবে। সব তিক্ততা ভুলে তাঁর দল চেয়েছিল আবার সাম্মানিকভাবে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু সেই সুযোগটাই আর দিলেন না। একেবারে চুপিসারেই বিদায় নিলেন।
পুরনো দিনের মানুষদের স্মৃতিচারণে থেকে গেছেন। কিন্তু সেইসব গল্প বলার লোকেরাও তো হারিয়ে যাচ্ছেন। স্মৃতিচারণধর্মী দারুণ একটা বই লিখেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, বইটার নাম— অকপটে। সেই বইটাও আর পাওয়া যায় না।

(‌বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ — আশির দশক:‌ফিরে দেখা। সেই সময়ের রাজনীতি, খেলা, সিনেমা, সাহিত্য নানা বিষয়কে ছুঁয়ে দেখা। সেই সময়ের শিরোনামে যাঁরা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের কথাও। চাইলে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.