পরমা চ্যাটার্জি
‘সু’ ….. আমার অনেকটা জুড়ে থাকা ছোটবেলা।
‘সু’ আমার হারিয়ে যাওয়া ঝরঝরে, দামাল হাওয়ার স্মৃতি, একটা খোলা জানলা ও, যার মধ্যে দিয়ে আমি আমার ছোটবেলাকে আরো রঙিন করে পেয়েছি।
ও আমার বোনের মতো, পাশের বাড়িতে থাকা আমার প্রিয় বান্ধবীর বোন। কী যে পাগলের মতো ভালোবাসত আমায়। ওদের দোতলার শোবার ঘর, আর আমাদের দোতলার শোবার ঘর জানলা দিয়ে দেখা যেত। কিন্তু মাঝে মস্ত উঠোন, একটা গলি– এইসব ছিল। ‘সু’ পারে তো সারাক্ষণ জানলার পাশে খাটে বসে থাকত, কখন আমায় দেখা যায়, যখন আমিও কোনও কাজে আমাদের জানলার কাছে আসতাম, ও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেঁচিয়ে কথা বলতে শুরু করত, যাতে আমি একবার ওর দিকে তাকাই।
তখন ফোন ছিল না, দেশলাইয়ের বাক্সে সুতো, কাঠি দিয়ে ফোন তৈরি হল। দুজনে দু বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে, ওই বাক্সে মনপ্রাণ দিয়ে গল্প করব। অনেক কসরৎ করে দুই ছাদে দেশলাই বাক্স, সুতো সহযোগে রাখা গেল, কিন্তু কথা? সে তো সেই চিৎকার করে। কিন্তু এটাই ওর ভালোবাসা।
হ্যাঁ আমরা ছাদে ছাদে গলা ফাটিয়ে গল্প করতাম, লোডশেডিং এ গানের লড়াইও ছাদ থেকে ছাদে। সারা পাড়া শুনত– শুনুক, ওর কিছু যেত আসত না, সব তো আমার জন্য।
মালগুডি ডেজ নামে হিন্দি সিরিয়াল হত রাতে, তার একটা গল্প ছিল ‘স্বামী’। তাতে মাঝে মাঝে ‘স্বামী——’ বলে একটা ডাক ছিল, রেশ টেনে। সিরিয়াল শেষ হলেই ‘সু’ এভাবে আমার নাম ধরে পাড়া কাঁপিয়ে ডাকত, এটাই ছিল ওর ভালোবাসা।
খেলার সময় ও আমার দলে থাকবে, গল্প করার সময় ও আমারই পাশে ঠেলে গুঁতিয়ে বসবে। আমার বিয়ের সময় খুব মন খারাপ ওর, সেটার প্রকাশ ছিল রেগে কথা না বলা। আমি চলে যাচ্ছি যে। বলেছিলাম, কাছেই তো যাচ্ছি, আসব তো মাঝে মাঝেই, তখন সেই ছোটবেলার মতোই গল্প হাসি ঠাট্টা হবে। কিন্তু আমি যে কুমারী থেকে গৃহিণী হয়ে গেলাম। তাই আমার কথা আমিই রাখতে পারিনি।
আজ ‘সু’ নেই, অসময়ে চলে গেছে। জানি রে, তোর বুকে একরাশ অভিমান। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোকে এখনও ভুলিনি, ভুলবও না। কারণ এমন নিখাদ ভালোবাসার স্বাদ যে একমাত্র তুই–ই দিতে পারিস। এই স্মৃতিচারণ তোর প্রতি আমার ভালোবাসা রে।
অনেক স্মৃতি জমে থাকে। না বলা কথা হয়েই থেকে যায়। ছেলেবেলার কোনও বন্ধুর কথা মনে পড়ছে ? কোনও মাস্টারমশাই বা আত্মীয়দের কথা মনে পড়ছে ? কোনও সুখস্মৃতি ভাগ করে নিতে চান ? অতীতের কোনও ঘটনার জন্য কারও কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চান ? কোনও যন্ত্রণার কথা বলে একটু হালকা হতে চান ? কারও কাছে দুঃখপ্রকাশ করতে চান ?
বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ – স্মৃতিটুকু থাক। এটি মূলত পাঠকের মুক্তমঞ্চ। অকপটে নিজের নানা অনুভূতির কথা লিখে জানাতে পারেন। নির্বাচিত লেখাগুলি প্রকাশিত হবে বেঙ্গল টাইমসে। শব্দ সংখ্যা ১৫০ থেকে ২৫০ ।লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com