এত মাথা থাকলে গুলিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক

সবুজ সরখেল

বাংলায় একটা চালু প্রবাদ আছে, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। ভারতীয় ক্রিকেট দলের এখন সেই দশা। এমনিতেই অধিনায়ক আর কোচ থাকলে কার কথায় দল হবে, তা নিয়ে একটা ঠান্ডা লড়াই থেকেই যায়। যেটা প্রকট আকার নিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলি–‌গ্রেগ চ্যাপেল জমানায়। তার আগেও অধিনায়ক বনাম কোচের ঠান্ডা লড়াই মাঝে মাঝেই দেখা গেছে।

রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য বিরাট কোহলির সেই জাতীয় সমস্যা ছিল না। থাকলেও তা সামনে আসেনি। এই জুটির সব সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের উর্ধ্বে, তা হয়ত নয়। তবু কোথাও একটা সমন্বয় ছিল। কিন্তু সেই দলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। ধোনি দুরন্ত অধিনায়ক। হয়ত আগামীদিনে দুরন্ত কোচও হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু তাঁকে মেন্টর করে জুড়ে দেওয়ায় হয়ত আরও জটিলতা বাড়ল।

প্রথম দুই ম্যাচে হারের পরই দেওয়াল লিখন অনেকটা স্পট হয়ে গিয়েছিল। পরের তিন ম্যাচে জিতলেও সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে। তাকিয়ে থাকতে হবে নেট রানরেটের দিকে। ভারতের মতো দলের কাছে এটাই যথেষ্ট লজ্জার। আফগানিস্তান যদি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়!‌ বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না। হায় রে, এখন কিনা তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আফগানিস্তানের দিকে!‌

এই ভরাডুবির কারণ কী?‌ বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। ১)‌ টানা এতদিন ধরে ক্রিকেট খেলে অনেকেই ক্লান্ত। ভেতরের সেই তাগিদটা হারিয়ে গিয়েছিল। ২)‌ আইপিএল শেষ হতে না হতেই বিশ্বকাপ। ভারতের সব খেলোয়াড়ই ব্যস্ত ছিলেন আইপিএলে। ফলে, তাঁদের ক্লান্তিটা আরও বেশি। ৩)‌ দল নির্বাচন নিয়েও নানা প্রশ্ন। অশ্বিনকে নেওয়াই যদি হল, গোঁয়ার্তুমি দেখিয়ে মাঠের বাইরে বসিয়ে রাখার কোনও যুক্তি নেই। ৪)‌ সব খেলাই সন্ধের দিকে। মূলত টিভি সম্প্রচারের কথা মাথায় রেখেই এই সময়সূচি। ফলটা ভুগতে হল ভারতীয় দলকে। শিশির বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল। টসে হারটাও হয়ে দাঁড়াল আরও বড় ধাক্কা। ৫)‌ ইচ্ছেমতো ব্যাটিং অর্ডার বদল। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আচমকা রোহিত তিনে, কোহলি চারে। এটা কৌশল নাকি আগেই হার মেনে নেওয়া!‌ ৬)‌ পাকিস্তানকে অতিরিক্ত হালকাভাবে নেওয়া। আর সেই ম্যাচে হারের পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সিরিয়াস হয়ে যাওয়া। এই দুটোও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। ৭)‌ দল যদি কোহলিই গড়েন, ধোনির তাহলে ভূমিকাটা কী?‌ কোহলি যে অশ্বিনকে চান না, সেটা ওপেন সিক্রেট। ধোনিও কি তাহলে সুর মেলালেন?‌ ৮)‌ কোহলি আগাম ঘোষণা করে দিলেন, বিশ্বকাপের পরই নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন। শুধুই কি ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্ত?‌ বোর্ডকে পাল্টা চাপ ফিরিয়ে দেওয়া নয় তো!‌ এই ঠান্ডা লড়াইটা কিন্তু ধিকিধিকি করে জ্বলছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.