মুনমুনের সঙ্গে দিব্যি নেমে পড়লেন সুইমিংপুলে

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: আটের দশকে টিভির দুনিয়ায় সে এক ঝড়। নিস্তরঙ্গ দূরদর্শন হঠাৎই যেন সাবালক হয়ে উঠেছিল সুব্রত মুখার্জির সুবাদে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সুব্রত—মুনমুন জুটির সুবাদে।

সেই সময় একটি সিরিয়ালকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল টেলিভিশন জগৎ। চৌধুরি ফার্মাসিুটিক্যালস নামস সিরিয়ালে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সুব্রত মুখার্জি ও মুনমুন সেন। একজন রাজনীতিবিদ কিনা নায়কের চরিত্রে! তাও আবার নিরীহ কোনও চরিত্র নয়। একেবারে সুইমিং পুলে স্নানের দৃশ্যও আছে।

আসলে, সেটাই ছিল সুচিত্রা কন্যা মুনমুনের প্রথম টিভি সিরিয়াল। পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় মুনমুন সেনকে আগেই বেছে নিয়েছিলেন।কিন্তু উল্টোদিকে নায়ক কে হবেন? যেমন তেমন কোনও টিভি আর্টিস্ট হলে তো হবে না। নজরকাড়া কোনও একজনকে নায়ক করতে হবে। আপার সিনে পাড়ার পরিচিত মুখ দিয়েও চলবে না। সবমিলিয়ে একটু অন্যরকম কেউ। যাকে ঘিরে চমক থাকবে। কাকে কাস্টিং করবেন, বেশ দুশ্চিন্তাতেই পড়লেন অগ্নিদেব।

এমন সময় বুদ্ধি দিলেন পরিচালকের মা। এমনিতেই অগ্নিদেবদের বাড়িতে সুব্রতর যাতায়াত ছিল। ফলে, পরিচালকের মা বেশ ভালই চিনতেন এই বিধায়ককে। তখন বলে বসলেন, হ্যাঁ রে, ওই চরিত্রে সুব্রতকে নিলে কেমন হয়! আইডিয়াটা তো মন্দ নয়। সুব্রত তখন দেখতে বেশ সুদর্শন। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েনি। তাছাড়া, চল্লিশ—বিয়াল্লিশটা তেমন বয়স নয়।

অগ্নিদেব কথাটা পাড়লেন সুব্রতর কাছে। সুব্রত বললেন, আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তার জন্য রাজীব গান্ধীর পার্মিশন লাগবে। তাঁকে জিজ্ঞেস না করে করতে পারব না। বর্ণময় সুব্রতকে বেশ পছন্দই করতেন প্রধানমন্ত্রী। এর কারণও ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর বিপর্যয়ে এই বঙ্গের অনেকে তাঁর সঙ্গত্যাগ করলেও সুব্রত কিন্তু ইন্দিরার সঙ্গেই ছিলেন। এটা জানতেন বলেই রাজীবও বেশ দুর্বল ছিলেন বাংলার এই তরুণ তুর্কি নেতার প্রতি। ফলে, অনুমতি পেতে সমস্যা হল না।

হইহই করে শুটিং শুরু হয়ে গেল। মিডিয়ায় ঝড় ওঠাও শুরু। সুইমিং দৃশ্য কাগজে বেরিয়ে গেল। বিতর্ক আরও নতুন মাত্রা পেল। সেই সময় জনপ্রিয় বিনোদন ম্যাগাজিন ছিল টেলিভিশন। সেখানে বাম বিধায়ক জয়ন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে প্রায় যুদ্ধ লেগে গেল সুব্রতর। জয়ন্ত বিশ্বাস মনে করেছিলেন, এই আচরণ সুব্রতর শোভা পায় না। এতে একজন জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাবে। দীর্ঘ এক লেখা লিখলেন।

অন্যদিকে, সুব্রতও কম যান না। তিনিও পাল্টা কলম ধরলেন। তিনি লিখলেন, জয়ন্ত কোনওদিন বিয়েই করল না। কোনও মেয়ের প্রেমেই পড়ল না। ও রোমান্টিকতার কী বোঝে! ওকে একদিন মুনমুনের বাড়িতে নিয়ে যাব। দেখব কেমন মাথা ঠিক রাখতে পারে। মুনমুনের কাছে গেলে ওর মাথা ঘুরে যাবে।

বাস্তবে সুব্রত ও জয়ন্ত বিশ্বাস দুজনেই ছিলেন খুব ভাল বন্ধু। বিধানসভায় যুক্তির লড়াই যেমন হত, তেমনি একসঙ্গে খুনসুটিও হত। সেই সময় এই দুটি লেখা বাংলার রাজনীতিতেও বেশ ঝড় তুলেছিল। আসলে, সুব্রত বরাবর এরকমই বেপরোয়া।স্বয়ং রাজীব গান্ধী ছাড়পত্র দিয়েছেন, এবার কে কী বলল, থোড়াই কেয়ার করেন!

সবমিলিয়ে সিরিয়ালটি ১৪ সপ্তাহ চলেছিল। অবশ্য, তখন তো মেগা সিরিয়ালের চল ছিল না। অধিকাংশ সিরিয়াল ১৩, ১৪ পর্বেই শেষ হত। অন্য অনেক সিরিয়ালের মতো সেই সিরিয়ালও বিস্মৃতির অতলেই চলে গিয়েছিল। সুব্রতর মৃত্যু আবার যেন তাকে চর্চায় ফিরিয়ে আনল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.