ভারত–‌পাক সিরিজই পারে সম্প্রীতি ফেরাতে

সোহম সেন

বিশ্ব ক্রিকেটে আরও এক মহারণ। মূলপর্বে শুরুতেই ভারতের সামনে পাকিস্তান। এই ম্যাচটা এলে একই সঙ্গে একটা রোমাঞ্চ। একইসঙ্গে একটা আশঙ্কার চোরাস্রোত। এই ম্যাচকে ঘিরে আবার অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে না তো?‌

একশ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁদের যত দেশপ্রেম, এই ম্যাচের সময়। পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই যেন বিশ্বজয় হয়ে গেল। এরপর আর ট্রফি না জিতলেও চলবে। আবার উল্টোটাও আছে। ট্রফি জিতলেও এই ম্যাচটায় হারা চলবে না।

পরিসংখ্যান বলছে, দুই দেশ শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর আগে। তাও আবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে নয়। শেষ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়েছে এক দশকেরও আগে। খেলার মাঝে এমন যুদ্ধ–‌যুদ্ধ আবহ কারা আনতে চাইছেন?‌

ভারত–‌পাক রেশারেশি তো আগেও ছিল। তাই বলে গাভাসকার–‌কপিলদেবরা কি পাকিস্তানে যেতেন না?‌ নাকি ইমরান–‌মিয়াদাদরা ভারতে আসতেন না?‌ সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে ভারত যেবার পাকিস্তানে গেল, সেবার পাক সফরে যাওয়ার আগে তাঁরা দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে। বাজপেয়ী কী বলেছিলেন, আজও প্রবাদ হয়ে আছে। তিনি সৌরভ–‌শচীনদের বলেছিলেন, ‘‌দিল ভি জিতকে আনা।’‌ অর্থাৎ, হৃদয়ও জিতে এসো। একজন রাষ্ট্রনায়কের কাছে এমনটাই প্রত্যাশিত।

কিন্তু এখন পরিবেশটাই পাল্টে গেছে। জাতীয় চ্যানেলে সারাক্ষণ পাক বিরোধী জেহাদ। প্রতিদিন একটা করে যুদ্ধের আবহ তৈরি করো। যাই ঘটুক, এর সঙ্গে পাকিস্তানকে জুড়ে দাও। মনে মনে ঘৃণা ঢুকিয়ে দাও। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ছাড়া এমন প্রোপাগান্ডা চলতে পারে!‌ একা বিজেপিকে দায়ী করে লাভ নেই। ইউপিএ আমল থেকেই সিরিজ বন্ধ রাখার তোড়জোড়। মুম্বইয়ে তাজ হোটেলে উগ্রপন্থী হামলার সঙ্গে ক্রিকেটকে জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা তখনও দেখা গেছে। এই আমলে দিন দিন সেটা বাড়ছে। সরকারি উদ্যোগে ঘৃণার বিপুল বিস্তার।

মাঝখান থেকে খেলাটাই বন্ধ হয়ে গেল। আইপিএলে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের নেওয়া চলবে না। অলিখিত একটা ফতোয়া পৌঁছে গেল সব ফ্র‌্যাঞ্চাইজির কাছে। কার ঘাড়ে কটা মাথা?‌ ওই দেশে সিরিজ খেলতে যাওয়া চলবে না। ওই দেশ থেকে এই দেশে সিরিজ খেলতে আসা যাবে না। ঘৃণার রাজনীতিকে ক্রিকেটের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। বোর্ডও অসহায়। তাকে সরকারের সুরে সুর মিলিয়েই কথা বলতে হবে।

এক দশকের ওপর সিরিজ বন্ধ তো রাখলেন। এতে দুই দেশের সম্পর্কের কী উন্নতিটা হল?‌ সেই আবহমান কাল ধরে শুনে আসছি, কাশ্মীর সমস্যা। এখনও সেই কি সেই সমস্যা কমেছে?‌ বরং অনেক বেড়েছে। ভোট এলেই একটা করে সার্জিকাল স্ট্রাইক দেখাতে হবে। বীরত্বের ফানুস ওড়াতে হবে। নিজেদের সব অক্ষমতাকে আড়াল করতে দেশপ্রেমের হাওয়া তুলতে হবে। উত্তরপ্রদেশ ভোট আসছে। আরও একটা মোক্ষম তাস চাই। পাকিস্তান তো আছে। মাঝে মাঝে ভাবি, ভাগ্যিস একটা পাকিস্তান আছে। নইলে, এরা কী বলে ভোট চাইত?‌ কী বলে হাওয়া গরম করত?‌

রাজনীতির ব্যাপার রাজনীতির লোকেরা বুঝুন। তার সঙ্গে খেলাকে না জুড়লেই নয়!‌ নিজেরা সমস্যা মেটাতে পারছেন না। সেই ব্যর্থতার বোঝা খেলাধূলার ওপর কেন চাপাচ্ছেন?‌ যে সম্প্রীতি আপনারা আনতে পারেননি, তা ক্রিকেটাররাই পারেন। ওঁদের খেলতে দিন। এই দমবন্ধ আবহে ওঁরা অন্তত তাজা অক্সিজেন আনতে পারবেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.