উত্তম জানা
মাঝে মাঝেই প্রশ্ন ওঠে, বুদ্ধিজীবীরা কেন নীরব?
বিজেপি পন্থীরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন নীরব?
আবার তৃণমূল পন্থীরা চুপিসারে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব?
যেন সবাই একসঙ্গে চিৎকার করবেন। খোল–কত্তাল বাজাবেন। বাংলাদেশের কুমিল্লায় একদল দুষ্কৃতি দু্ষ্কর্ম করল, তা নিয়ে সবাইকে পাড়া তোলপাড় করতে হবে। সেখানকার অশান্তিকে জোর করে এখানেও টেনে আনতে হবে।
এই সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে বুদ্ধিহীনতা, যুক্তিহীনতার চর্চা আরও বাড়ছে। শুধু একটি নির্দিষ্ট দলের আইটি সেলকে দোষারোপ করে লাভ নেই। মগজে মগজে এঁড়ে যুক্তির পটভূমি অনেক আগে থেকেই সাজানো। তাই মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে যায়। মগজ থেকে মগজে গোপনে পাচার হয়ে যায়।
এই মোবাইলেই তো কত ভাল জিনিসের লিঙ্কও আসে। কজন শুনেছেন গুলজার বা জাভেদ আখতারের ইন্টারভিউ? কজন দেখেছেন ইতিহাসধর্মী বা সাহিত্যধর্মী ভাল কোনও ডকুমেন্টরি? আসলে, আপনি যেটা খোঁজেন, ইউটিউব লিঙ্কগুলো আপনার কাছে সেটাই হাজির করে। আপনি যদি পানু ছবি কয়েকটা দেখেন, দেখবেন আপনার কাছে অনবরত সেই জাতীয় লিঙ্কই আসছে। আপনি যদি সেতার বা শরোদ শোনেন, দেখবেন সেই জাতীয় আরও দশটা লিঙ্ক আসছে। মোদ্দা কথা, যিনি যেটা খোঁজেন, তিনি ঠিক সেটা পেয়ে যান। যদি আপনার মগজে সারাক্ষণ ওই ‘হিন্দু–মুসলমান’ ঘুরতে থাকে, তবে সেটাই আসবে। আপনার মোবাইলে অনেক গোপন লিঙ্ক আসে, এটা ভেবে আপনি শ্লাঘা বোধ করুন। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিন।
আচ্ছা, এত কথা বলতে হবে কেন? সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে বা মুখ্যমন্ত্রীকে মুখ খুলতে হবে কেন? এমনিতেই তাঁদের ভুলভাল ভাষণের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। সুস্থ, স্বাভাবিক ও দায়িত্বশীল কথা তাঁদের মুখে কমই শোনা যায়। কোথায়, কোন মঞ্চে কোনটা বলতে হয় আর কোনটা বলতে নেই, এই পরিমিতি বোধটাই নেই। এরপর এই ইস্যুতে যদি তাঁরা বলতে শুরু করেন, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। কারণ, দুজনেই আগুন নেভানোয় নয়, আগুন জ্বালানোয় পারদর্শী। দুজনেই ভয়ঙ্কর হাততালি প্রত্যাশী। এমনিতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এই অবস্থায় তাঁদের একটা দুটো কথা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
তাই তাঁরা যদি চুপ থাকেন, তবে থাকতে দিন। জোর করে তাঁদের কথা বলাতে গিয়ে আরও বড় বিপদ ডেকে আনবেন না।