‌সেদিন যদি শিশিরবাবুকে পদত্যাগ করাতেন!‌

অনির্বাণ বসু

মাঝে মাঝেই গুঞ্জন উঠছে, বিজেপি ভেঙে আরও কেউ কেউ হয়ত তৃণমূল শিবিরে পা বাড়াতে পারেন। সেইসব নামগুলোও ভেসে উঠছে। সবগুলো না হোক, কয়েকটা জল্পনা আগামী দিনে সত্যি হয়ে উঠতেও পারে।

বিধায়করা এতদিনে জেনেই গেছেন, দলত্যাগ করলেও তাঁদের কিছুই হবে না। স্পিকার মশাই তাঁদের অনন্ত সময় দিয়ে যাবেন। গত দশবছরে দলত্যাগ বিরোধী আইনে কারও শাস্তি হয়নি। কিন্তু সাংসদরা এই সাহস পাচ্ছেন কোথা থেকে?‌ তাঁদের তো লোকসভার স্পিকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

এর জন্য বিজেপি নেতৃত্বই দায়ী। এমনকী লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা নিজেও কিছুটা দায়ী। বিজেপি যে দলত্যাগকে সেভাবে নিন্দা জানাতে পারবে না, এটা জানা কথাই। কারণ, রাজ্যে রাজ্যে তারা দল ভাঙিয়ে সরকার তৈরি করেছে। এমনকী বিজেপির যাঁরা সাংসদ, তাঁদের অনেকেই দলবদলু। তাই এই ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গেলে নিজেদের দিকেও আঙুল উঠবে।

স্পিকার মশাই যে খুব কড়া বা তিনি যে দারুণ নিয়ম মেনে সভা পরিচালনা করেন, গত দু’‌বছরে এমন কোনও ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেননি। তিনি দলের ইশারাতেই চলেন, মোটামুটি এটাই প্রতিষ্ঠিত। অথচ, একটু ব্যক্তিত্ববান হলে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের পতাকা ধরলেও বিজেপি নেতৃত্বকে কার্যত হাত গুটিয়েই থাকতে হবে। কারণ, প্রশ্ন উঠবে, শিশির অধিকারীর সদস্যপদ খারিজ হবে না কেন?‌ ভোটের আগে সুনীল মণ্ডল ও শিশির অধিকারী যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। সরাসরি না হলেও শুভেন্দুর আরেক ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীও গেরুয়া শিবিরে। ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর সুনীল মণ্ডল আবার পুরনো ঘরে ফিরে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের আর কোনও অভিযোগও নেই। পড়ে রইলেন শিশিরবাবু। বর্ষীয়ান শিশিরবাবু সাংসদ হিসেবে মোটেই সক্রিয় নন। তাঁকে যদি তখন পদত্যাগ করানো হত, তাহলে বিজেপিকে আজ এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হত না।

সেদিন স্পিকার মশাই শিশিরবাবুর বিষয়টা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন বলেই আজ তিনি অসহায়। এই রাজ্যের বেশ কয়েকজন সাংসদ পদত্যাগ না করেই সরাসরি তৃণমূলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন। নইলে তাঁরা দল ছাড়া তো দূরের কথা, ভাবার সাহসও পেতেন না।

বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীও বেশ অসহায়। তিনি অন্যদের দলবদলের নিন্দা জোরালো ভাষায় করতে পারবেন না। কারণ, তাঁর নিজের বাড়িতেই দুই সাংসদ আছেন, যাঁরা তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে এখন তৃণমূলে নেই। তিনি কোন মুখে অন্যদের সমালোচনা করবেন?‌ তাঁর বাবা ও ভাই কেন এখনও পদত্যাগ করেননি, এই প্রশ্নটা তাঁর দিকে ধেয়ে আসবেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.