কুণাল দাশগুপ্ত
বাড়ি ফিরে বিস্তর ঝড়–ঝঞ্জার মধ্যে পড়তে হয়েছিল প্রলয়কে। স্ত্রী কমলিকার বান্ধবীর দাদার বিয়েতে যেতে পারেনি। কারণ সেদিনই দলের সেরা ফুটবলারটির হেড যখন বিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে দেয়, তার থেকেও দ্রুত গতিতে কাঁপতে থাকে একলাখি গ্যালারির বুক। মার্টিন হেড করে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধ হয় তাঁর হৃদযন্ত্র। আঁধার নেমে আসে গ্যালারিতেও। পড়ি কি মরি করে মাঠে ঢোকে প্রলয়। মার্টিনের ক্যারোটিড আর্টারি থমকে আছে। হাতে মাত্র তিন থেকে চার মিনিট সময়। এরই মধ্যে যা করার করতে হবে। যেভাবেই হোক, হৃদযন্ত্রকে ছন্দময় করতে হবে।
সিপিআর দিয়ে মার্টিনের হার্টের সঞ্চারীর সুর চালু করে প্রলয়। সেখান থেকে সোজা আইসিসিইউ। বাইরে দুঃশ্চিন্তার লাগেজ নিয়ে বসে থাকে প্রলয়। আর অনেক রাতে বাড়ি ফিরে কমলিকার একটানা তীব্র শ্লেষ প্রলয়ের স্নায়ুকোষ গুলোকে তীব্র ঝড়ের পর রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা শতচ্ছিন্ন ডালপালা সমেত গাছগুলোর মতোই নিষ্প্রাণ করে দিয়েছিল।
তাও যদি নামের আগে ডাক্তার শব্দটা থাকতো। প্লেয়ারদের পা টিপে তো দু’পয়সা কামাও। শান্ত প্রলয় বোঝাতে পারেনি ডাক্তার ফিজিওর মধ্যে আজ আর তেমন তফাত করা হয় না। এমনকী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ফিজিওথেরাপিকে আজ আর প্যারামেডিকেল কোর্স বলছে না।
পরের দিন অবশ্য সংবাদপত্রগুলো এক সামন্য ফিজিওকে নিয়ে প্রলয় ঘটিয়ে দিয়েছিল। তাতে তো আর পাসবইয়ের পালস রেট বাড়ে না। তাই সংসারের হীরের টুকরো সদস্যটিকে ‘হেরো’ তকমা নিয়েই থাকতে হয়ছে।
কথায় আছে, গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। কলকাতা ছেড়ে গোয়ার ক্লাবে চলে গিয়েছে প্রলয়। ওখানে পয়সা বেশি। সম্মান বেশি। বিজ্ঞানমনস্কতাও বেশি।
স্ট্রোক হওয়া পর্যন্ত ওখানেই ছিল।
কমলিকা তার ছেলেকে নিয়ে আগেই বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিয়েছিল। কলকাতায় পিসতুতো ভাইয়ের বাড়িতেই এসে থাকতো।
ডার্বি দেখতে সেই ভাইয়ের বাড়িতেই এসেছিল প্রলয়। ওই ম্যাচ মিস করা যাবে না। ওই ভাইয়ের বাড়ি বসেই টিভিতে ম্যাচ দেখবে। ওতেই আনন্দ।
ম্যাচের শেষে ঝনঝন শব্দ। পাশে ঘর থেকে দৌড়ে এল ভাই শুভাশিস। মাটিতে প্রলয়। চশমাটা এক হাত দূরে। ভাঙা বোতল থেকে গড়িয়ে পড়ছে স্কচ। সব ছেড়ে দিলেও ওটিকে ছাড়তে পারেনি। অতি উত্তজনার ফল। সিপিআর–এরও সুযোগ নেই।