শান, শানুদের চেয়ে ঢের বেশি বাঙালি লতা

রাহুল বিশ্বাস

কুমার শানু, শান বাবুল সুপ্রিয়রা জন্মসূত্রে বাঙালি হলেও হিন্দি গান গেয়েই তাঁরা বিখ্যাত। মাঝে মাঝে খেয়ালের বশে বা ভালোবাসার টানে বাংলা অ্যালবাম বের করেন। কিন্তু সেইসব গানের বাংলা উচ্চারণ শুনলে মাথা গরম হয়ে যায়।

আশা ভোঁশলে এবং কবিতা কৃষ্ণমূর্তি অবাঙালি হলেও বাংলাকে ভালবাসেন। রীতিমতো ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন। কিন্তু তাঁরা যখন বাংলা গান করেন, স্বাভাবিক কারণেই অবাঙালি টান থেকে যায়। আশা ভোঁশলের রবীন্দ্র সঙ্গীতে ‘এসো শ্যামোলো সুন্দোরো’ শুনতে বেশ শ্রুতিকটূ লাগে। তবুও অবাঙালি বলেই তাঁদের উপর মাথা গরম হয় না।

lata-mangeshkar5

আর এই মাথা গরম হওয়া বা না হওয়ার মুহূর্তে মনে হয়, এক বাংলা না জানা অবাঙালি শিল্পীর কথা। বলিউডের কোনও শিল্পীর বাংলা গান শুনলেই মনে পড়ে তাঁর কথা। তিনি লতা মঙ্গেশকার।

গুপী বাঘার গানে আছে, ‘সে যে সুরেরই ভাষা, ছন্দেরই ভাষা, আনন্দেরই ভাষা। ভাষা এমন কথা বলে বোঝেরে সকলে।’ লতা সুর জানেন, ছন্দ জানেন। তাই বাংলা না জেনেও বাংলা গানকে জেনেছেন। তাঁর বাংলা গান ছাপিয়ে গেছে অনেক বাঙালিকেও।

একবার শান, বাবুলের বাংলা গান শুনুন। আর একবার লতার বাংলা গান শুনুন। সুর, তাল, লয়ের তুলনা করছি না। শুধু উচ্চারণের তুলনা করছি। বলুন তো কার গান বেশি বাংলা ? কার উচ্চারণ বেশি বাঙালি ? অবশ্যই লতার।

lata-mangeshkar6

একটা ভাষা না জেনেও সেই ভাষায় এভাবে গান গাওয়া যায়! কতখানি প্রতিভা ও নিষ্ঠা থাকলে তবে এমনটা করা যায় ? ও মোর ময়না গো-র মতো সোলো গানের কথা বাদই দিলাম। প্লে ব্যাকের কথা ভাবুন। প্লে ব্যাক গাইতে গেলে কণ্ঠে নাটকীয়তা লাগে। সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে গানকে মানানসই হতে হয়। যাতে অভিনেত্রীর এক্সপ্রেশন গায়িকার গলাতেও ফুটে ওঠে। ভাবুন আব্দুল্লা-মর্জিনার ‘হায় হায়, প্রাণ যায়’ গানটির কথা। সলিল চৌধুরির কথা, সুর। মিঠু মুখার্জির নাচ। আর লতার গান মিলেমিশে একাকার। কে বলবে এই গানটা যিনি গাইছেন, তিনি বাংলা জানেন না ! কে বলবে লতা বাঙালি নন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.