নন্দ ঘোষের কড়চা
(সকাল থেকেই রেডিওতে লতা মঙ্গেশকারের গান। শুনে ফেলেছেন নন্দ ঘোষ। তাঁর দাবি, লতাকে নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করা হয়। তাই নিয়ে লিখতে চান। তাঁকে ‘না’ করবে, কার ঘাড়ে কটা মাথা ? অতএব, তিনি বেসুরো গেয়েই ফেললেন। পড়ুন।)
ধরুন আপনাকে কেলে কুচ্ছিৎ দেখতে। আর আপনার প্রতিবেশী লম্বা। চওড়া, ফর্সা। এই সুন্দর দেখতে হওয়াটা কি প্রতিবেশীর গুন? কুচ্ছিৎ দেখতে হওয়াটা কি আপনার দোষ ? নিশ্চয় নয় । ভগবান যাঁকে যেমন করে গড়েছেন। কে কেমন কাজ করল, সেটাই বড় কথা।
ঠিক তেমনই আমার আপনার গলায় সুর নেই। লতা মঙ্গেশকারের গলায় সুর আছে। এতে লতার কৃতিত্ব কোথায় ? কৃতিত্ব কিছু থাকলে ভগবানের। গলায় মধু ঢালা সুর, তাই দিয়ে সারেগামা গাইলাম, এটা কোনও কাজের কথা নয়। গলায় সুর নেই, আওয়াজ শুনে কাক-চিল লজ্জা পায়, অথচ গেয়ে ফাটিয়ে দিচ্ছে, সেটাই আসল ক্রেডিট। এই যেমন আমাদের রূপম কিম্বা শিলাজিৎ।
গুলজার গান লিখলেন, নৌসাদ সুর দিলেন, আপনি তাতে গলা মেলালেন। এতে কী এমন অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করা হল ? যে গানে সুরের ওঠা-পড়া নেই, কথার মার-প্যাঁচ নেই, সেই গানকে হিট করানোই আসল ক্রেডিট। যেমন ধরুন লুঙ্গি ডান্স, লুঙ্গি ডান্স। গোটা গানে ঘুরে ফিরে একটাই কথা- লুঙ্গি ডান্স । পারবেন এমন গান গাইতে ? অথবা ধরুন মুন্নি বদনাম হুয়ি, বিড়ি জ্বালাইলে –এইসব গান গেয়ে ফাটাতেন, তো মেনে নিতাম আপনি সুর সম্রাজ্ঞী।
জীবনে একটাও আইটেম গাইতে পেরেছেন ? চটুল গান ওই একটাই মেরে ইয়ে হুশন জওয়া। তাও এমন করে গাইলেন যে মন রূপকথার রাজ্যে ভেসে যায়। ওসব গান অচল ম্যাডাম, অচল। ডিস্কো থেকে গাওয়া হবে, নিউ ইয়ার্স ইভে গাওয়া হবে, এমন গান আছে আপনার স্টকে ? নেই।
আজকের যুগে আপনার গানও অচল, আপনিও অচল। যেমন অচল আপনার পোশাক। মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছেন। যেন কাপড়ের পুঁটুলি। আজকের যুগে গায়িকাদের গরম গরম পোশাক পরতে হয়, স্টেজে উঠে নাচতে হয়। পারবেন জিন্স পরে জিঙ্কা-চিকা নাচতে ?
খুব তো বাংলা গান গেয়েছেন। কার গান ? সলিল চৌধুরি। কে সুর দিযেছে ? সলিল চৌধুরি। আরে ওর গান তো পথসভার শিল্পী গাইলেও হিট হয়। গান তো রূপম ইসলামের গান। দেখি কেমন ক্ষ্যামতা। জয়েন করুন তো কোনও একটা বাংলা ব্যান্ডে। তারপর ধরুন প্লে ব্যাক। শুভশ্রী নাচছে, ‘যতই ঘুড়ি ওড়াও ছাতে/ লাটাই আমার হাতে।’ করুন তো এমন প্লে ব্যাক। পারবেন না। কারণ, আপনি ঘুড়ি ওড়াতেও জানেন না। গাইতেও জানেন না। সুর সম্রাজ্ঞী না ছাই। আর কোনও শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। তাই বাজার চলতি শব্দ আউড়ে লোকে ফুটেজ খাচ্ছে।