সন্দীপ লায়েক
সাহিত্য থেকে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ হয়েছে অথচ সাহিত্যটা পড়া হয়নি এমন ব্যতিক্রম আমার খুবই কম হয়েছে। তবে এখানে গল্পটা একটু অন্যরকম।
আসলে বাংলাদেশি লেখক মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন গল্পের নামটার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মতো এমন একজন মানুষকে জড়িয়ে দিয়েছেন যে ভাবিনি কোনটা আগে করবো-পড়ব না দেখব? তাছাড়া চারিদিকে প্রচুর আলোচনা, সমালোচনা! তাই দেখতে সুযোগ আগে পেলাম দেখেই ফেললাম। টরেন্টের যুগ যেতে বসেছে, প্লাটফর্ম হইচই(www.hoichoi. tv) সাবস্ক্রিপশন নেয়াই ছিল.. মূল গল্প না হয় পড়ব অন্যক্ষণ।

এ ছাড়াও আরেকটা কারণ হল সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত থ্রিলারে (চতুস্কোণ, বাইশে শ্রাবণ, দ্বিতীয় পুরুষ) এটি নতুন সংযোজন। এ বিষয়ে সৃজিতবাবুর রান্নার হাতটি কিন্তু মুস্কান জুবেরির মতোই (রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননির মুখ্য চরিত্র) দারুণ কিন্তু মাঝে মাঝে একটু গরম মশলা দিয়ে ফেলেন আর কি! তা হলেও ঋত্বিক-সত্যজিৎ-ঋতুপর্ণ -গৌতম-কৌশিক ধারার লেজ তিনি ধরে আরামসে ঝুলে থাকতে পারেন, অস্বীকার করি না।
যাই হোক গল্পে ফিরি। গল্পের প্রধান প্রোটাগনিস্ট মুস্কান জুবেরি ও তার রাস্তার ধারে বিশাল রেস্টুরেন্ট “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি” এটা নিয়েই নয় সিরিজের মূল গল্প।
কম বয়সে সাইবেরিয়ার জনহীন প্রান্তরে প্লেন ক্রাশ করে দুর্ঘটনায় পড়া ডাক্তারি জানা বাংলাদেশি মুস্কান কীভাবে কী খেয়ে (কী মাংস?) জানাকয়েক সঙ্গী নিয়ে কীভাবে বেঁচে ফিরে, পশ্চিমবঙ্গে সম্পত্তির মালিকানা পান, কীভাবে নিজের হোটেলে মুস্কান স্পেশাল ডিসে স্বাদ বাড়ান এসব আমি বলব না। এজন্য আপনাকে এটি দেখতেই হবে।
তবে যেটা বলব সৃজিত গল্পটা ভালই বলেছেন। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছেন । আরেকটা কথা মুস্কান জুবেরির চরিত্রে বাংলাদেশি আজমেরি হক বাধন অসামান্য। বলতে গেলে তাঁর পারফেরমেনসের জন্যই সিরিজটা দেখা যায়। তাছাড়া গোয়েন্দা নিরুপম চন্দর চরিত্রে রাহুল বোস ও আতর আলির চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচাৰ্য যথাযথ। ছোট চরিত্রে অঞ্জন দত্তও ঠিকঠাক। আরেকটা কথা, একেন বাবু অনির্বাণ চক্রবর্তী কিন্তু ওসির ছোট্ট সিরিয়াস অভিনয়ে জমিয়ে দিয়েছেন।
তাই একটু থ্রিলার একটু হরর আর একটু মুস্কান জুবেরির দুর্দান্ত রেসিপির টানে আপনি আসতেই পারেন “রবীন্দ্রনাথ কখনও খেতে আসেননি”তে! প্রতিটি পর্বে মুস্কানের লিপে দুকলি রবীন্দ্রসংগীত মন্দ লাগেনি। তবে যাকে নিয়ে সমালোচনা সেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ব্যবসা করাটা বাংলায় ভাল থ্রিলার লেখা বা পরিচালনা করার জন্য আমি ক্ষমা ঘেন্না করে দিলাম।