সবুজ সরখেল
নরেন্দ্র মোদি, মমতা ব্যানার্জি আর বিরাট কোহলি। এই তিনজনের মধ্যে মিল কোথায়?
কেউ কেউ বলতেই পারেন, দুজন রাজনীতি করেন। একজন ক্রিকেট খেলেন। অর্থাৎ, ভিন্ন ঘরানার। এঁদের মধ্যে মিল খুঁজতে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না।
কিন্তু একটা মস্তবড় মিল আছে। আর সেই মিলটার হাত ধরে আরও কতগুলো মিল তৈরি হয়ে যায়। আসলে, একটার সঙ্গে আরেকটা নিবিঢ়ভাবে জড়িয়ে থাকে।
তিনজনই অসম্ভব ছবি পাগল। নিজেদের ছবি ছাপানোর জন্য তিনজনই অত্যন্ত সস্তাদরের নাটক করতে পারেন। ছবিতেই নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা খোঁজেন। দুজনের হাতে রয়েছে সরকারি বিজ্ঞাপন বা হোর্ডিং দেওয়ার ক্ষমতা। তাই তাঁরা হোর্ডিংয়ে, বিজ্ঞাপনে ভেসে ওঠেন। কোন কোন আইটেমগুলো ছবি হয়ে উঠতে পারে, সে ব্যাপারে টনটনে জ্ঞান আছে। আরেকজন তো বিজ্ঞাপনের মডেল। এর মধ্যে অবশ্য অন্যায় কিছু নেই। একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটার, তার ওপর ভারত অধিনায়ক। তাঁকে যে কেউ মডেল করতে চাইবেন। কিন্তু মুশকিলটা হল, ইনি টুইটার আর ইনস্টাগ্রামেই শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ভালবাসেন। সারাক্ষণ ছবি পোস্ট করেই চলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনকে বারবার বেআব্রু করে নিজেকে হ্যাংলার মতো জাহির করেন। খেলার জন্য যত না ছবি বেরোয়, স্ত্রীর সঙ্গে ছবি বেরোয় তার থেকে ঢের বেশি। এবং সেগুলো রীতিমতো ফটোগ্রাফার দিয়ে তোলানো। সময় সুযোগ বুঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া।
মনস্তাত্ত্বিকরা বলেন, যাঁরা অত্যন্ত ছবিপ্রিয় হয়ে থাকেন, যাঁরা নিজেদের ছবিতে বারবার জাহির করতে চান, তাঁদের অন্য কতগুলো বৈশিষ্ট আছে। ১) তাঁরা ভয়ঙ্কর আত্মকেন্দ্রিক। নিজেকে ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। ২) অন্যের সম্পর্কে তাঁরা একেবারেই শ্রদ্ধাশীল হন না। অন্যরা কেউ কিছুই জানে না। তিনি আছেন বলেই সবকিছু চলছে, এমনটা জাহির করেন। ৩) যোগ্য লোকেদের ধারেকাছে তেমন ঘেঁসতে দেন না। যদি কেউ তাঁকে ছাপিয়ে যায়। ৪) এঁরা স্তাবক পরিবৃত হয়েই থাকতে ভালবাসেন। স্তাবকদের প্রশস্তি বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। ৫) সামান্যতম সমালোচনাও এঁরা সহ্য করতে পারেন না। একটু বিরূপ নজরে পড়লেই কীভাবে তাঁর ডানা ছাঁটা যায়, সেই অঙ্ক কষতে শুরু করেন। তার জন্য যতদূর নামতে হয়, নামতেও পারেন।
বাকি দু’জনের কথা আপাতত থাক। বিরাট কোহলির কথাতেই আসা যাক। প্রায় দু’বছর ব্যাটে তেমন বড় মাপের রান নেই। শেষ সেঞ্চুরি দু’বছর আগে, তাও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কিন্তু ছবি সাঁটানোয় বিরাম নেই। বড় বড় ভাষণে বিরাম নেই। অন্যকে তাচ্ছিল্য করাতেও বিরাম নেই। এমনকী বশংবদ টিম খেলাতে গিয়ে বারবার দলকে ঠেলে দিচ্ছেন হারের মুখে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো বোলার থাকা সত্ত্বেও চার টেস্টে তাঁর জায়গা হল না। চারশোর উপর উইকেট, পাঁচখানা সেঞ্চুরি, তারপরেও তাঁকে অলরাউন্ডার বলা যাবে না? ভারতের মতো দলে একজন স্পেশালিস্ট অফস্পিনার থাকবে না? বিভিন্ন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বারবার সওয়াল করছেন অশ্বিনের হয়ে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞান কারণে তিনি কিছুতেই অশ্বিনকে খেলাবেন না। নিজের পুরনো রাগ নাকি অস্তিত্বের সঙ্কট? অশ্বিন সফল হলে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা নেই তো?
বাকি দুজনের মতো তাঁকে ঘিরেও মিডিয়ার ধন্য ধন্য রব থেকেই গেছে। দিদিমণির বিরুদ্ধে বাংলার মিডিয়ায়, মোদিবাবুর বিরুদ্ধে জাতীয় মিডিয়া কিছু লেখা যাবে না। লিখলেই রোষানলে পড়তে হবে। কোহলির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। ধারাভাষ্যকাররা ভয়ে থরহরি কম্পমান। একটু বেসুরো বললেই হয়ত ধারাভাষ্যের প্যানেল থেকে বাদ চলে যাবেন। সাংবাদিকরা পাত্তা না পেলেও চটাতে চান না। গদগদ হয়েই থাকেন। তিনি ছবি সাঁটালেই কাগজে সেটা অনিবার্য ছবি। কোহলি এটা বোঝেন। তাই অবলীলায় ছবি সাঁটিয়ে যান।