বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: ছেলেমানুষির একটা সীমা থাকে। কলকাতা ময়দান যেন সেই সীমারেখাটাই বুঝতে পারছে না। কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখা, মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার একটা রোগ যেন তাড়া করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। কে কতখানি প্রতিবন্ধী, তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে।
দিন কয়েক আগের কথা। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে নতুন লগ্নিকারীর চুক্তি নিয়ে প্রায় দু’মাস ধরে চলল নানা জটিলতা। শেষেমেষ বৈঠক হল নবান্নে। সমাধান হল না। আপাতত একটা জোড়াতালি দেওয়া হল। ক্লাব কর্তারা কতটা নাবালক, কতটা অপদার্থ, সেটা বোঝা গেল।
এবার আইএফএ কর্তারা উঠে পড়ে লেগেছেন তাঁরা কতটা নাবালক, সেটা প্রমাণ করতে। কলকাতা লিগে দুই প্রধান খেলছে না। মোহনবাগান ব্যস্ত এএফসি কাপের প্রস্তুতিতে। আর ইস্টবেঙ্গল এখনও দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। আইএফএ কী করবে, ভেবে পাচ্ছে না। গালভরা গভর্নিং বডির সভা ডাকা হল। কিছুই নির্যাস বেরোলো না। মোদ্দা কথা, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হবে। তাঁকে সমস্যার কথা জানানো হবে।
এই কর্তাদের অপদার্থতা দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। দুই ক্লাব খেলবে কি খেলবে না, সেটাও কি মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে দেবেন? লিগের অন্যান্য ক্লাবগুলি প্রশ্ন তুলেছে, কেন এই দুই ক্লাব খেলবে না। কেউ কেউ এই দুই ক্লাবকে শাস্তির দাবিও তুলেছেন। আই এফ এ কী করবে, এটা একেবারেই তাদের ব্যাপার। আসল কথা হল, এক ক্লাবের ফুটবল সচিব হলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। আরেক ক্লাবের কর্তা হলেন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা। আবার এদিকে, গা জোয়ারি করে আই এফ এ–র চেয়ারম্যান হয়েও বসে আছেন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা।
দাদা–ভাইকে পুনর্বাসন দিয়েও সমস্যা তাহলে মিটছে না। উল্টে সমস্যা আরও বাড়ছে। আসলে, আই এফ এ কর্তারা এতটাই ভয়ে কম্পমান যে কী করবেন, বুঝে উঠতেই পারছেন না। দুই বড় ক্লাবকে শাস্তি দিলে দুই ক্লাব চটে যাবে, সর্বোপরী মুখ্যমন্ত্রী দাদা ও ভাই চটে যাবেন। আবার কোনও ব্যবস্থা না নিলে অন্য ক্লাবগুলি চটে যাবে।
এই অবস্থায় অপ্রিয় হওয়ার দায় নিতে চাইছেন না ‘প্রচারপ্রিয়’ আই এফ এ সচিব। তাই বলটা পাঠিয়ে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রীর কোর্টে। প্রথমত, যে সমাধানসূত্রই বেরিয়ে আসুক, সবাই মেনে নেবে। কারও আপত্তি করার ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলে দাদা আর ভাইয়েরও কিছু বলার থাকবে না। তৃতীয়ত, এই সুযোগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফ্রেমে একটা ছবি হয়ে যাবে। আর সেটা কাগজে বেরোবেই। হয়ত প্রথম পাতায়। প্রচারপ্রিয় সচিবের কাছে মোক্ষম একটা সুযোগ। চতুর্থত, মুখ্যমন্ত্রীও এসব ক্ষেত্রে ‘পরিত্রাতা’ হয়ে উঠতে ভালইবাসেন। সবাই অযোগ্য, আমি একমাত্র সমাধান করতে পারি, এরকম একটা ছবি তুলে ধরতে তিনি অদ্ভুত একটা আনন্দ পান। আরও একবার সেই সুযোগটা এসে যাবে তাঁর সামনে। আর ধন্য ধন্য করার জন্য বঙ্গজ মিডিয়াকূল তো আছেই।