অজন্তাকে অন্য শিবিরে না পাঠানো পর্যন্ত তৃপ্তি হচ্ছে না?‌

সরল বিশ্বাস

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সত্যিই অনেকের কোনও কাজ নেই। তাই তাঁরা দিব্যি পড়ে আছেন অজন্তা বিশ্বাসকে নিয়ে। তাঁকে শাস্তি না দিলে যেন কেউ কেউ শান্তি পাচ্ছেন না।

গত কয়েকদিন নানা মহলে অজন্তা বিশ্বাসের ওই লেখার প্রসঙ্গ আলোচনা হতে দেখেছি। বিনীতভাবে অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছি, আপনি কি লেখাটা পড়েছেন?‌ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর ‘‌না’‌। কেউ কেউ ‘‌হ্যাঁ’‌ বলেছেন ঠিকই, তবে সেই ‘‌হ্যাঁ’‌তে তেমন জোর নেই।

কারও হোয়াটসঅ্যাপে হয়ত লিঙ্ক এসেছে। কেউ হয়ত গ্রুপে লিঙ্ক পোস্ট করেছেন। সেই লিঙ্কটাও খুঁটিয়ে পড়ার ধৈর্য অনেকের ছিল না। কিন্তু না পড়েই যে যাঁর মতো মন্তব্য করে গেছেন। শৃঙ্খলার জন্য পার্টির কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দিয়ে গেছেন।

ajanta

প্রথমত, আমি লেখার চারটি কিস্তিই পড়েছি। অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ একটি লেখা। অনেক অজানা ইতিহাস উঠে এসেছে এই চার কিস্তির লেখায়। প্রথম তিন কিস্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ পর্যন্ত নেই (‌কিন্তু তার আগেই রে রে করে তেড়ে আসা শুরু হয়ে গেছে)‌। শেষ কিস্তির শেষদিকে উল্লেখ আছে। তাও বিরাট কোনও প্রশস্তি নেই। যেটুকু আছে, সেটুকু না থাকলে অবিচারই হত। মনে রাখতে হবে, এটা একজন ইতিহাসের অধ্যাপক লিখছেন। তিনি একটা গবেষণাধর্মী নিবন্ধ লিখছেন। পার্টির ইস্তেহার লিখছেন না।

বাংলার নারীশক্তি নিয়ে লেখা হচ্ছে। তাতে মমতা ব্যানার্জির নাম উল্লেখ করা যাবে না?‌ এ তালিবানি ফতোয়া নয়?‌ ভালটা কেন লিখেছেন, খারাপগুলো তো লেখেনননি— এটা কোনও যুক্তি হল?‌ মমতা ব্যানার্জির হাজারটা কাজ নিয়ে আমার আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর কোনও প্রশংসা করা যাবে না, এমন বেআক্কেলে যুক্তিতেও আস্থা নেই।

হ্যাঁ, এটা বলতেই পারেন, জাগো বাংলায় কেন লিখেছেন?‌ অজন্তা তো একবারও বলেননি, তিনি বেশ করেছেন। তাঁর কাছে একটা লেখা চাওয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর মতো করে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন। হয়ত ভাবতে পারেননি এরকম তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। সেই লেখায় অনেক বাম নেত্রীর কথাও তো ছিল। বরং তাঁদের অনেক বেশি জায়গা দেওয়া হয়েছে। বরং এক্ষেত্রে জাগো বাংলা উদারতা দেখিয়েছে। সেই সব বাম নেত্রীর প্রশংসা বাদ দেওয়া হয়নি। জাগো বাংলা যদি এতখানি উদারতা দেখাতে পারে, বাম নেতৃত্ব এত অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন কেন?‌ অতীতে অনেকের ক্ষেত্রেই এই অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে। কেউ কেউ দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের অন্য শিবিরে ঠেলে দিয়েছেন।

যদি মনে হয়, জাগো বাংলায় লিখে অজন্তা ভুল করেছেন, তাঁকে ভালভাবে সেটা বললেই তো হয়। তিনি তো বর্তমান নেতৃত্বের কন্যা সম। সূর্যকান্ত মিশ্র বা বিমান বসুরা কি আলাদা করে কথা বলতে পারতেন না?‌ বিষয়টা সেখানেই মিটিয়ে নিতে পারতেন না?‌ এর জন্য শোকজ, জবাবদিহি এগুলো কি খুব জরুরি ছিল?‌ প্রকাশ্যে ‘‌মূর্খামি করেছে’‌ বলাটা কি খুব শোভনীয়?‌

যে সমস্যাটা সহজে মেটানো যায়, সেটাকে নিয়ে এত জট পাকানো কি সত্যিই খুব জরুরি ছিল?‌ বিষয়টা সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে আপনিই থিথিয়ে যেত। কিন্তু সেটাকে যুদ্ধং দেহী চেহারা না দিলে চলছিল না। কেউ কেউ ভেবে নিলেন, শৃঙ্খলা জাহিরের একটা মোক্ষম সুযোগ পাওয়া গেছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা চলবে না।

আর নেতৃত্ব যদি ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন, তাহলে কর্মীরা তো আছেনই। ফেসুবকেন মারিতং জগৎ তো আছেই। একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, আচ্ছা জাগো বাংলা না হয় তৃণমূলের মুখপত্র। কিন্তু ফেসবুকের স্রষ্টা মার্ক জুকেরবার্গ কোন মার্কসবাদ–‌লেনিনবাদে দীক্ষিত?‌ ফেসবুক বুঝি বামপন্থীদের মুখপাত্র?‌ জাগো বাংলায় লেখা যদি অন্যায় হয়, তাহলে ফেসবুকে লেখা কতটা শ্রেণিসংগ্রাম, নেতৃত্ব ভেবে দেখতে পারেন।

জানি না, জল কতদূর গড়াবে। কেউ একটু বেসুরো হলেই শত্রু চিহ্নিত না করা পর্যন্ত কেউ কেউ স্বস্তি পান না। আরও একধাপ এগিয়ে তাঁদের শত্রু শিবিরে না পাঠিয়ে শান্তি পান না। এই শূন্যের আবহেও দলে সেই লোকের সংখ্যা কম নয়। তাই সামান্য একটা ব্যাপারকে তাঁরা ‘‌অসামান্য’‌ প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

জাগো বাংলা তো ঠিক সেটাই চেয়েছিল। এত এত তৃণমূল নেতা নেত্রীর লেখা ছেপে যত না প্রচার পেয়েছে, একা অজন্তার লেখাই তার পঁচিশগুণ প্রচার এনে দিল। বাম মহল সারাজীবনে যতবার গণশক্তি শব্দটা উচ্চারণ করেছেন, তার থেকে বেশিবার এই কদিনে ‘‌জাগো বাংলা’‌ শব্দটা উচ্চারণ করলেন। সত্যিই, ফাঁদে পা দেওয়ার ব্যাপারে বামেদের বিকল্প নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.