অভিরূপ কুমার
বয়স নিছকই একটা সংখ্যা। এই বয়স মোটেই তারুণ্যের মাপকাঠি নয়। কথাটা মাঝে মাঝেই শোনা যায়। কারণ, কেউ কেউ থাকেন যাঁরা বারবার বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। কেউ কেউ থাকেন যাঁরা বয়সের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তেমনই একজন দাসপুরের গণেশ সামন্ত।
এলাকার পরিচিত বাম নেতা। বর্তমানে সিপিএমের কলোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক। বয়স ৬৫, অকৃতদার। পার্টিই ধ্যান–জ্ঞান। বয়স ভুলে ছুটে যান বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এই অতিমারিও তাঁর উদ্যমকে হার মানাতে পারেনি। একদিকে যেমন নিয়মিত দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন, অন্যদিকে কেউ বিপণ্ণ শুনলেই নিজেকে বিপণ্ণ করে ছুটে যাচ্ছেন, পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
গত কয়েকমাস ধরে এলাকায় রেড ভলান্টিয়াররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। কারও বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার, কারও বাড়িতে ওষুধ। কখনও নেমে পড়ছন এলাকা স্যানিটাইজ করার কাজে। আবার কখনও বাইকের পেছনে বসে রোগীকে পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালে। গোটা বাংলা জুড়েই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। মানুষ মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসাও করছেন।
শুক্রবার রাতের দিকে হঠাৎ করে খবর এল, উত্তর গোবিন্দ নগর এলাকায় একজনের অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গেছে। রোগী সঙ্কটাপণ্ণ। চাইলে তিনি এলাকার রেড ভলান্টিয়ারদের ফোন করে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারতেন। বাড়ি থেকে ফোনেও তদারকি করতে পারতেন। কিন্তু এত রাতে পিপিই কিট পরে নিজের ছোট্ট স্কুটি নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন উত্তর গোবিন্দ নগরে। গিয়ে দেখলেন, সত্যিই রোগীর অবস্থা খুব শোচনীয়। তক্ষুণি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। বাড়িতেও তেমন কেউ নেই, যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেন। গ্রামের অনেকেই তখন ঘুমিয়েও পড়েছেন।
কিন্তু গণেশবাবু তো আছেন। তিনি নিজের স্কুটির পেছনে বসালেন সেই রোগীকে। গভীর রাতেই সোজা নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। করোনা হয়েছে কিনা, সেই ফল তো পরে জানা যাবে। আগে তো অক্সিজেন দিয়ে বাঁচাতে হবে। গণেশবাবুর উদ্যোগেই ভর্তি করা হল হাসপাতালে। দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেন চলার পর অনেকটাই বিপন্মুক্ত সেই রোগী।
এটা একটা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। এভাবেই বারবার ঝাঁপিয়ে পড়েন গণেশবাবুর মতো যুবকরা। বয়স ৬৫! তাতে কী হয়েছে? মনের দুর্জয় সাহস আর বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ার সেই পুরনো অভ্যেসটা দিব্যি আছে। তাই রাজ্য জুড়ে এত হাজার হাজার রেড ভলান্টিয়ারের পাশে উজ্জ্বল ওই ৬৫ বছরের তরুণ।