হেমন্ত রায়
অনেকদিন আগে কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ একটা কথা বলেছিলেন। বিধানসভার স্পিকারকে দেখে তাঁর ধন্যি মেয়ে ছবির রবি ঘোষের কথা মনে পড়েছিল। রবি ঘোষ হয়েছিলেন রেফারি। কেউ গোলে শট মারলেই তিনি তাকাচ্ছিলেন গাঁয়ের জমিদার মশাইয়ের দিকে। জমিদার জহর রায় যদি বলেন, তবেই তিনি গোল দেবেন, নইলে বাঁশি বাজাবেন না।
এই কথা বলেছিলেন বলে অরুণাভ ঘোষের বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ মোশান আনা হয়েছিল। বিধানসভায় ডেকে এনে তাঁকে ছ ঘণ্টার জন্য জেল দেওয়া হয়। পরে অবশ্য আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, সেই বিচার আইন মেনে হয়নি।
এই নিয়ে তিনি তিনবার স্পিকার হলেন। মনে হতেই পারে, অভিজ্ঞ স্পিকার। হ্যাঁ, দশ বছর কোনও একটা দায়িত্ব পালন করলে তাঁকে সেই কাজে অভিজ্ঞ বলাই যায়। কিন্তু আমাদের স্পিকার মশাই কি সত্যিই অভিজ্ঞ হয়েছেন? সত্যিই কি স্পিকার হিসেবে তাঁকে সম্মান জানানো যায়! প্রতি বছর গুরুত্বপূর্ণ সব বাজেট গিলোটিনে পাঠানো একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গিলোটিন মানে বিনা আলোচনায় বাজেট পাশ হয়ে যাওয়া। এবারও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হল না।
রাজ্যপালের ভাষণের পর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার যে প্রস্তাব, সেখানে তিনি বারবার বাধা দিলেন বিরোধী দলনেতাকে। কখনও বললেন, এটা অপ্রাসঙ্গিক। এটা বলা যাবে না। কখনও কোনও শব্দ আপত্তিকর বলে বাদ দিলেন। আবার কখনও বললেন, এটা বিচারাধীন বিষয়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলা যাবে না।
শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম নিয়ে বলতে গেলেই সেটা বিচারাধীন হয়ে যায়। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী যখন সেই বিষয় নিয়ে যা খুশি আবোল তাবোল বকতে থাকেন, তখন সেটা বিচারাধীন থাকে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে চলেন, সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় না। কিন্তু বিরোধী বিধায়করা সরকারের নামে বা মুখ্যমন্ত্রীর নামে একটা কথা বললেই কীভাবে তাঁকে থামাতে হবে, স্পিকার সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
স্পিকারের মর্যাদা রক্ষা করা সদস্যদের দায়িত্বে মধ্যে পড়ে। কিন্তু স্পিকারকেও সেই মর্যাদার যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। এই স্পিকার দশ বছরেও সেই চেয়ারের মর্যাদা বোঝেননি। চেয়ারকে ক্রমাগত হাসির খোরাক করে তুলছেন। এমন স্পিকার থাকলে সেই চেয়ারের সম্মান বজায় রাখা সত্যিই মুশকিল।