আজীবন গর্ব করে বলব, আমাদের একটা সানি ছিল

সবুজ সরকার

দেখতে দেখতে বাহাত্তর হয়ে গেল। বলাই যায়, তিনি বৃদ্ধ হলেন। কিন্তু এখনও পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দিব্যি ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখনও যে কোনও তরুণকে লজ্জায় ফেলে দেবে তাঁর পরিশ্রম। সাম্প্রতিক ক্রিকেটেরও এত খুঁটিনাটি খোঁজ রাখেন, যা অবাক করে দেওয়ার মতো। এমন লোককে বৃদ্ধ হলেন কীভাবে বলা যায়!‌

এই প্রজন্মকে বোঝানো যাবে না, সুনীল গাভাসকার ঠিক কোন জাতের ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁরা হয়ত উইকিপিডিয়া খুলবে। দেখবে ১২৫ টেস্ট, ১০১২২ রান, ৩৪ শতরান। তারপর বলবে, দশ হাজার রান তো অনেকেরই আছে। ১২৫ টেস্ট তো অনেকেই খেলেছে। এই জন্যই নেভিল কার্ডাস নামক লোকটা স্কোরবোর্ডকে আস্ত একটা গাধা বলেছিলেন। কারণ, স্কোরবোর্ড বা রেকর্ড থেকে কিছুই বোঝা যায় না। যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে গাভাসকারের ১৩ টা শতরান। এই তথ্য জানার পর কেউ হয়ত এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এক করে ফেলবেন। তাঁদের বোঝানো যাবে না, হল, গিলক্রিস্ট, মার্শাল, গার্নার, হোল্ডিং, রবার্টসদের কথা।

sunil gavaskar

বোঝানোর দরকারও নেই। আজ ১০ জুলাই। সেই মানুষটার জন্মদিন। আমাদের মতো যাঁদের বেড়ে ওঠা সাতের দশক ও আটের দশকে, তাঁরা জানি সুনীল গাভাসকার নামটার মাহাত্ম্য। সত্তরের দশককে উত্তাল দশক বলা হয়। একদিকে সিনেমার পর্দায় মুশকিল আসান করছেন অমিতাভ বচ্চন। গুন্ডাদের মেরে ঠান্ডা করে এনে দিচ্ছেন ন্যায় বিচার। সে তো ছিল পর্দার কথা। কিন্তু বাস্তবে ব্যাট হাতে দুনিয়া শাসন করছেন এক বেঁটে মারাঠি। আবির্ভাব সিরিজেই ৭৭৪ রান!‌ ভাবা যায়!‌ তাও আবার সর্বশক্তিমান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।

সারাজীবনে কী সব বোলারদের সামলাতে হয়েছে!‌ অথচ, মাথায় কোনওদিন হেলমেট পরতে দেখা যায়নি। বিনা হেলমেটে ওই ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলারদের সামলানো!‌ অনেকটা যেন রূপকথার মতোই। কখনও কখনও বড়জোর ছোট্ট একটা স্কাল ক্যাপ। এখন আর কাউকে স্কাল ক্যাপ পরতে দেখি না। এখনও মনে পড়ে দশ হাজার রানের সেই মুহূর্তটা। ইজাজ ফাকিকে লেট কাট মেরে সোজা দৌড়। তেনজিংয়ের এভারস্ট জয় দেখিনি। কিন্তু সানির দশ হাজার তো দেখেছি। এটাই বা কম কী!‌

খেলা ছাড়ার পরেও নিজেকে কীভাবে ধরে রাখতে হয়, সে ব্যাপারেও উদাহরণ সানি। যখন যে কাজটা করেন, নিষ্ঠা নিয়েই করেন। চাইলেই হয়ত কোচ বা নির্বাচক হতে পারতেন। সে পথা পা বাড়াননি। বোর্ডের ক্ষমতা থেকেও দূরে দূরেই থেকেছেন। ক্রিকেট ধারাভাষ্যকেও প্রাণবন্ত করে রেখেছেন দিনের পর দিন। সেখানেও তিনি যেন ভারতীয় ক্রিকেটের বিবেক।

gavaskar2

বাকি দিনগুলো এভাবেই থাকুন। আমরা গর্ব করে বলি, আমাদের একটা গাভাসকার ছিল। এই গর্ব আজীবন বয়ে বেড়াতে চাই। আমরা শচীন, কোহলিকে ভালবাসি। তাঁদের জন্যও গর্ব করি। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন এলে চোখ বুজে মনে পড়ে দশ হাজার রানের সেই দৌড়টা।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.