‌একটি পেরেকের কাহিনী

উত্তম জানা

দিন কয়েক আগের কথা। ফেসবুকে জানতে পারলাম, সাগরময় ঘোষের জন্মদিন। অনেকেই ছবি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। অনেকেই দু–‌চার কথা লিখছেন। দেশ পত্রিকার এই সম্পাদক সম্পর্কে বলা হয়, যিনি দারুণ লিখতে পারেন, কিন্তু লেখেন না। কারণ, অন্যকে দিয়ে আরও ভাল লেখাটা লেখাতে চান।

সেদিনই খুঁজেছিলাম তাঁর লেখা ‘‌একটি পেরেকের কাহিনী’‌। বইটির কথা আগেই শুনেছি। নানা কারণে পড়া হয়ে ওঠেনি। এক বন্ধুর সৌজন্যে পেয়েও গেলাম। সম্ভবত ছিয়াশি পাতার বই। মনে হল, দ্রুত পড়ে ফেলি। সেই দিনই দ্রুত পড়ে ফেললাম। শেষ করেই উঠলাম।

perek2

চিনলাম সাগরময় ঘোষকে। আরও ভাল করে বলতে গেলে, চিনলাম বিধানচন্দ্র রায়কে। তাঁর ডাক্তারি নিয়ে অনেক কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু তিনি যে কতবড় মাপের মানুষ, এই বইটি পড়লে তা আরও ভালভাবে বোঝা যায়। তাঁর ডাক্তারিকে বোঝার এটি একটি আদর্শ বই। গ্রাম থেকে আসা এক যুবক। যে একটি চাকরি জোগাড়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে মহানগরের রাজপথে। তার পায়ে একটি পেরেক ঢুকে গেল। ভর্তি হতে হল হাসপাতালে। অনেকেই নিদান দিলেন, পা কেটে বাদ দিতে হবে। কিন্তু একজন ডাক্তার বুঝেছিলেন, এই রোগীকে সারিয়ে তোলা যাবে। তাঁর চিকিৎসায় সেরে উঠলেন সেই যুবক। সেরে তো উঠলেন। এবার যাবেন কোথায়?‌ মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। চাকরি নেই। শেষমেষ সেই ডাক্তারবাবুকেই কিনা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হল। সেই ডাক্তারবাবুই হলেন বিধানচন্দ্র রায়।

এরপর সম্পর্ক আরও নিবিড় হল। রোজ সকাল আটটার মধ্যে পৌঁছে যেতে হয় ডাক্তারবাবুর বাড়ি। সেখানে কিছু জরুরি কাজ সেরে যেতে হয় হাসপাতালে। এভাবেই কাছ থেকে দেখেছেন ওই বনস্পতিকে। কত মজার ঘটনার নীরব সাক্ষী। একসময় একটি অপ্রীতিকর ঘটনায় বিধানবাবু তাঁকে ভুল বুঝলেন। বললেন, তুমি আমার নাম ডুবিয়েছো। আর কখনও আমার সামনে আসবে না। যুবক সব হারিয়ে আবার সেই নিস্ব। যেভাবেই হোক, বিধানবাবুর ভুল ভাঙাতেই হবে। রোজ সকালে বিধানবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিধানবাবু দেখেও দেখেন না। এভাবেই আস্তে আস্তে ভুল বোঝাবুঝি দূর হল।

পুরোটাই সেই বৈদ্যনাথের চোখ দিয়ে দেখা। সহজ সরল ভাষায় কী চমৎকার ছবি এঁকেছেন সাগরময় ঘোষ। এমন একজন মহান মানুষকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কোনও পাণ্ডিত্য জাহিরের চেষ্টা করেননি। মরমী কলমে তুলে এনেছেন সমসাময়িক কিছু ঘটনা। বিধানবাবুর জীবনী হয়ত অনেকেই লিখেছেন। তাতে নিশ্চিতভাবেই অনেক অজানা তথ্য আছে। কিন্তু এমন সহজ সরলভাবে আর কেউ তুলে ধরতে পেরেছেন!‌ মনে হয় না। বইটি সবার পড়া উচিত। দ্রুত পড়ে ফেলুন। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.