অজয় কুমার
প্রথম দাবিটা তুললেন জন বার্লা। তাঁর যুক্তি, উত্তরবঙ্গের মানুষ বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু সরকার সেই জনমতকে উপেক্ষা করছে। বিরোধী সাংসদ বা বিধায়কদের কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। উল্টে প্রতি পদে তাঁদের হেনস্থা করছে। তাহলে উত্তরবঙ্গ কেন আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হবে না?
আলাদা জেলার দাবি জানানো যদি সঙ্গত হয়, তাহলে আলাদা রাজ্যের দাবি করাও অসঙ্গত নয়। সেই দাবি মানা হবে কিনা, তা নিয়ে যুক্তি–পাল্টা যুক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু সেই দাবি জানানোটা আর যাই হোক, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়।
ভারতে যতবার রাজ্য ভাগ হয়েছে, নানা মহল থেকে দাবি উঠেছে বলেই হয়েছে। যাঁরা রাজ্য ভাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন, তাঁদেরই অনেকে পরবর্তীকালে নতুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাহলে তো সেই মুখ্যমন্ত্রীদেরও বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে হয়।
লোকসভায় উত্তরবঙ্গে আটটি আসন। সাতটিতে জয়ী বিজেপি, একটিতে কংগ্রেস। শাসক দলের একজন সাংসদও নেই। গত দু’বছরে সেই সাংসদদের কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? প্রশাসনিক কোনও ব্যাপারে তাঁদের ডাকা হয়নি। ন্যূনতম মর্যাদাটুকুও দেওয়া হয়নি। উল্টে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
বিধানসভার ক্ষেত্রেও রাজ্যে তৃণমূলের যত বড় ব্যবধানেই জয় আসুক, এই আট জেলার অধিকাংশ আসনেই কিন্তু জয়ী বিজেপি। অর্থাৎ, রাজ্যের মানুষ যদি তৃণমূলকে গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন, এটাও ঘটনা। কিন্তু এই রায়কে সরকার কতটুকু মান্যতা দিচ্ছে?
যাঁরা হেরে গেলেন, তাঁদেরই আবার ঘুরপথে কোনও না কোনও কমিটির মাথায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরাই বকলমে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছেন। তাঁদের কথাতেই ডিএম, এসপিদের চলতে হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষও দিনের পর দিন দেখছেন।
এরপর যদি সত্যিই আলাদা রাজ্যের বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের দাবি ওঠে, সত্যিই কি তাঁদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা যাবে? বাংলা ভাগের উস্কানি নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে। বিজেপির অবস্থান নিয়েও সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু কেন এই দাবি উঠছে, তা নিয়ে সরকারও আত্মসমীক্ষা করুক। নির্লজ্জ গোঁয়ার্তুমি ছেড়ে জনপ্রতিনিধিদের যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হোক। বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করা আর যাই হোক, সুস্থ প্রশাসনের লক্ষণ হতে পারে না।