অজয় কুমার
দিন কয়েক আগের কথা। এবিপি আনন্দের একটি অনুষ্ঠান। মূলত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে। দিকপাল চিকিৎসকরা ছিলেন। দুই পরিচিত অভিনেতা ছিলেন। আরও অনেকেই ছিলেন। রেড ভলান্টিয়ারদের পক্ষ থেকেও এক তরুণকে ডাকা হয়েছিল। সবথেকে বেশি মুগ্ধ করে গেল সেই তরুণ। নাম দেবনীল পাল।
কী অসাধারণ উপস্থাপনা। আবেগ যেমন আছে, তেমনই আছে যুক্তির বিন্যাস। গঠনমূলক কাজের কথা যেমন আছে, তেমনই আছে রাষ্ট্রের উদ্দেশে প্রশ্নও। সেই প্রশ্ন এতটাই শালীনতা রেখে যে, শুনতে ভাল লাগে। প্রশ্ন মানে চিৎকার নয়, মূর্খের আস্ফালন নয়, নাটুকেপনা নয়। সবমিলিয়ে মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই।
দেবলীনের বক্তব্য শেষ হতেই সঞ্চালকের অসাধারণ কিছু মন্তব্য। সঞ্চালক সুমন বলেই ফেললেন, আমরা আশ্বস্ত হলাম, আওয়ার ফিউচার ইজ ইন সেফ হ্যান্ড। আরও অনেক কথা। যার নির্যাস, এরাই ভবিষ্যৎ। এরাই আগামীদিনে আলো দেখাবে। এরাই নতুন এক বাংলা গড়তে পারে।
সম্প্রতি আর কোনও বক্তা সম্পর্কে সঞ্চালককে এতখানি আবেগপ্রবণ হতে দেখিনি। প্রথমত, তরুণ বাম বন্ধু দেবলীনের এমন প্রাঞ্জল ও সাবলীল বক্তব্য। তারপর সঞ্চালকের ওই সংযোজন। দুই মিলিয়ে সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি। যে কোনও বাম মনষ্ক লোকেরই ভাল লাগবে।
পরের দিন এই ভিডিও ভাইরাল হল। মূলত বাম সমর্থকদের গ্রুপগুলো থেকে। এমনকী এবিপি আনন্দর লিঙ্কটাকেও অনেকেই শেয়ার করেছেন নিজেদের ওয়ালে। বোঝাই যাচ্ছে, যাঁরা নিজেদের ওয়ালে ওই ভিডিওটা শেয়ার করলেন, তাঁদের মনকেও কোথাও একটা ছুঁয়ে গেছেন দেবলীন। স্বয়ং সূর্যকান্ত মিশ্রও তাঁর ওয়ালে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
কিন্তু নীচের মন্তব্যগুলো পড়ে সত্যিই হতাশ হলাম। অনেকে ভিডিওটা না দেখেই যা পেরেছেন, বালখিল্যসুলভ মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকে ভিডিও দেখার পর এবিপি আনন্দকে ও সঞ্চালক সুমন দে–কে খোঁচা দিয়েছেন। তার মধ্যে বেশ কয়েকটা বেশ নোঙরা ভাষায়। মূল কথা, এবিপি আনন্দ তৃণমূলের দালাল। বোঝাই যাচ্ছে, এই ভিডিওটি তিনি দেখেননি। আবার কেউ লিখছেন, সুমনের বাবাও স্বীকার করতে বাধ্য হল। কেউ লিখলেন, একজনকে কেন ডাকা হল, আমরা যে এতকিছু করছি, আমাদেরকে তো ডাকা হল না, শালা বিজেপির দালাল। কেউ লিখলেন, তোরা শোভন–বৈশাখির পেছন পেছন ক্যামেরা লাগিয়ে রাখ, তোরা রেড ভলান্টিয়ারের কী বুঝিস। ইত্যাদি ইত্যাদি।
কয়েকজনের প্রোফাইলে গিয়ে দেখা গেল, বামেদের সমর্থনেই কথা বলছেন। কিন্তু বেশ নোঙরা ভাষায়। অন্তত ওইসব পোস্ট দেখলে বামেদের প্রতি কারও সহানুভূতি তৈরি হবে না। উল্টে রাগই হবে। আবার কেউ কেউ নিজের ছবি সাঁটাতেই ব্যস্ত। কোথায় কবে কার সঙ্গে হ্যাংলার মতো সেলফি তুলেছেন, সেই ছবি বারবার পোস্ট করছেন। কেউ একবার আলু দিয়ে দশবার সেই ছবি পোস্ট করেছেন। আর এঁদের কমেন্ট বলতে লাল সেলাম। তার বাইরে আর কিছুই বোধ হয় লিখতে শেখেননি।
হ্যাঁ, এরাও বাম। একদিকে এবিপি আনন্দের ওই তরুণ বন্ধু দেবলীন। একদিকে এঁরা। সেই তরুণ বন্ধু যদি এক পা এগিয়ে দেন, তবে এই বন্ধুরা দশ পা পিছিয়ে দেন। এবং এরা সংখ্যায় খুব কম, এমন ভাবারও কারণ নেই। তিরিশটা কমেন্টের অন্তত ১৮–২০ টা বাঁকা বাঁকা মন্তব্য। একটি চ্যানেল প্রাণ খুলে বামেদের প্রশংসা করল, এটুকুও নেওয়ার মানসিকতা নেই। কই, সূর্যবাবু তো বাঁকা মন্তব্য করেননি। তিনি খুশি হয়েছেন, তাই পোস্ট করেছেন। তিনি এই তরুণ সহযোদ্ধাকে কর্মী সমর্থকদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এবিপি আনন্দ কবে কী ভূমিকা পালন করেছিল, কবে কোন মিটিংটা দেখানো হয়নি, এই তিক্ততা মনে রাখেননি।
কিন্তু সমর্থকরা এত অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন কেন? তৃণমূল বা মিডিয়া বামেদের কতই বা দুর্নাম করতে পারে! তার থেকে এঁরা অনেক বেশি শক্তিশালী। পাড়ায় পাড়ায় এঁরাও কিন্তু আছেন। এই লোকেরাই যদি পাড়ায় পাড়ায় বামেদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো সত্যিই বড় কঠিন।