হেমন্ত রায়
অনেকদিন তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেননি। নিশ্চয় একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। অবশেষে তিনি সামনে এলেন। ঘোষণা করলেন, কেন্দ্রের উদ্যোগে টিকা কিনে তা রাজ্যকে দেওয়া হবে। এমন ভঙ্গিমায় বললেন, যেন বিরাট এক যুদ্ধজয় করেছেন।
টিকার ব্যাপারে এতদিন ধরে কেন্দ্র তাদের দায়িত্ব সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল। একেক সময় একেক রকম টিকা নীতি ঘোষণা হয়েছে। কখনও বলা হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ২৮ দিন পর। পরে বলা হল, ৪২ দিন পর। এভাবে বাড়তে বাড়তে এখন বলা হচ্ছে ৮৪ দিন পর। কোনটা আসল? এখন ৮৪ দিনের গল্প শোনানো হচ্ছে। তাহলে যাঁরা ২৮ দিন পর নিয়ে ফেললেন, তাঁদের কী হবে?
আসল কথা হল, সাপ্লাই নেই। তাই সময় বাড়াতে হচ্ছে। এর পেছনে কোনও গবেষণাও নেই। কোনও বিজ্ঞানও নেই। একদন অপরিণামদর্শী লোকের হাতে নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব থাকলে যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। টিকা যদি কেন্দ্র দিতে চায়, তাহলে সেটা আগে জানাতে কী হচ্ছিল? তাহলে এত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হত না। গঙ্গায় এভাবে শয়ে শয়ে লাস ভাসত না। এভাবে গণচিতা দেখা যেত না।
বিভিন্ন রাজ্যের থেকে দাবি ছিল। সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কার ছিল। তারপর কেন্দ্রের সম্বিত ফিরেছে। দেরিতে হলেও যদি শুভবুদ্ধি হয়, সেটা মন্দ নয়। কিন্তু এটা এত গলা ফুলিয়ে বলা কি সত্যিই খুব জরুরি? এখানেও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বিরোধীদের অহেতুক দোষারোপের রাস্তায় হেঁটেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, আগের সরকারগুলি ব্যর্থ। যেন করোনা আগের সরকারের আমলে হয়েছিল। সাত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও যদি কেউ ক্রমাগত আগের সরকারকে গালাগাল করে যায়, তাহলে বুঝতে হয় আসলে তিনি নিজের ব্যর্থতাকেই আড়াল করতে চাইছেন।
দ্বিতীয় দফার করোনা ঢেউ আসবে, বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন। তারপরেও অক্সিজেনের জোগান নেই, হাসপাতালে বেডের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এর জন্য বুঝি অন্যরা দায়ী! মানছি, আমার দেশের জনসংখ্যা বিপুল। কিন্তু আমার দেশে উৎপন্ন টিকার একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে বিদেশে। কারণ, সরকার আগাম বরাত দেয়নি। আগাম পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেনি। এই মূর্খামির দায়ও যেন আগের সরকারের।
জাতির উদ্দেশে ভাষণটা যে বিরোধীদের আক্রমণের মঞ্চ নয়, এই ন্যূনতম সহবৎ শিক্ষাটাই এখনও হল না। আগের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিরাও নানা সময়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সেগুলো নিশ্চয় আর্কাইভে আছে। আগে সেগুলো মন দিয়ে শুনুন। জেনে নিন, জাতির উদ্দেশে ভাষণে কী বলতে হয় আর কী বলতে নেই। এত বড় একটা দেশের প্রধামন্ত্রী এমন মূর্খামি করে যাবেন, এটা দেশের পক্ষে সত্যিই লজ্জার।