ওপেন ফোরাম
অনির্বাণ বসু
কার অক্সিজেন দরকার ? কার জীবনদায়ী ওষুধ দরকার। কোন এলাকা স্যানিটাইজ করা দরকার। একডাকে হাজির হয়ে যাচ্ছে রেড ভলান্টিয়ার। কেউ ছুটছেন বাইকে চড়ে। কেউ ছুটছেন টোটোয় চড়ে।
একঝাঁক তরুণ ছেলেদের দেখেও ভাল লাগছে। ভোটের ফল যাই হোক, মানুষ যতই শূন্যে নামিয়ে আনুক, এখনও সবথেকে বড় ভরসার ঠিকানা বোধ হয় এই ছেলেগুলোই। তাই শাসক দল বা বিরোধী দলকে মানুষ যত না ভরসা করছেন, তার থেকে বেশি ভরসা করছেন এই রেড ভলান্টিয়ারদের।
এতখানি ভরসার পাত্র হয়ে ওঠা খুব সহজ ছিল না। দিনের পর দিন, লাগাতার পরিশ্রমেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু কিছু ব্যাপার একটু দৃষ্টিকটূ লাগছে। সেগুলো সম্পর্কে এখন থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি।
সমাজমাধ্যমে নানা ছবি ভেসে আসছে। কেউ কেউ এটাকে একটু বেশিই দলীয়করণ করে ফেলছেন। এই ছেলেগুলো লাল বাহিনী, সেটা নিশ্চয় এলাকাবাসীর অজানা নয়। তাহলে এত পতাকা আর দলীয় প্রতীকের ছড়াছড়ি কেন? এত বিজ্ঞাপনের তো কোনও প্রয়োজন নেই। ধরা যাক, কারও বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে হবে। যাঁর বাড়িতে ওই কঠিন সময়ে অক্সিজেন পৌঁছে দিলেন, তিনি এমনিতেই মনে রাখবেন। কৃতজ্ঞ থাকবেন। তার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে কাস্তে হাতুড়ি স্টিকার সাঁটিয়ে দেওয়া খুব জরুরি? এবং এই কাস্তে হাতুড়ি সাঁটিয়ে দেওয়াটা খুব বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। বিভিন্ন এলাকায় এমন অন্তত একশোটি ছবি চোখে পড়েছে। অন্যরা প্রচার করছে, তাও নয়। খোদ কমরেডরাই নিজেদের ওয়ালে এইসব ছবি সেঁটে দিচ্ছেন।
ছবি তোলার ব্যাপারে আরও একটু সংযমী হলে বোধ হয় ভাল হয়। কাউকে কিছু দিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে বিরাট কোনও বাহাদুরি নেই। বরং, এতে সেই মানুষটিকে কিছুটা হেয় করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী যেমন কথায় কথায় বলেন, মনের রাখবেন এই দিয়েছি। মনে রাখবেন, আমি ওই দিয়েছি। এগুলো বারবার মনে করিয়ে দেওয়া মানে সেই মানুষকেই অসম্মান করা। বাম কর্মীরা কেন সেই পথে হাঁটবেন। এই মাত্র একজন তৃণমূল নেতার পরিবারের লোককে অক্সিজেন দিলাম। এইমাত্র বিজেপির একজনকে ভর্তি করলাম। এগুলো গলা ফুলিয়ে বলা কি সত্যিই খুব জরুরি? এতে কি সেই কাজের গুরুত্ব অনেকটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে না?
কোনও সন্দেহ নেই, বাম কর্মীরা দারুণ কাজ করছেন। দিনে–রাতে ছুটে যাচ্ছেন। অনেক মানুষকে ভরসা দিয়েছেন। মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা বুঝছেন। কিন্তু প্রচারের ব্যাপারে আরও একটু সংযত হওয়া জরুরি।