রক্তিম মিত্র
সিবিআই কি এভাবে গ্রেপ্তার করতে পারে? মুখ্যমন্ত্রী কি এভাবে গিয়ে ধর্না দিতে পারেন? আপাতত এই দুটো প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। হারিয়ে গেল করোনা, হারিয়ে গেল অক্সিজেনের অভাব, হারিয়ে গেল টিকা নিয়ে দুই সরকারের লেজে গোবরে অবস্থা।
এভাবেই আসল ইস্যুগুলো হারিয়ে যায়। ভোটের আগে এভাবেই হিন্দুত্বের নামে, হুইল চেয়ারের নামে মানুষের আসল ইস্যুগুলোই হারিয়ে গিয়েছিল। লকডাউনে কে কতখানি অপদার্থতা দেখিয়েছিলেন, সেই তুল্যমূল্য হিসেব হারিয়ে গেল। কেন অক্সিজেন নেই, কেন হাসপাতালে বেড নেই, কেন ডাক্তার নেই, এই বিতর্ক হারিয়ে গেল। কেন শিল্প নেই, কেন চাকরি নেই, এই বিতর্কও হারিয়ে গেল।
পাওয়া গেল নতুন একটা বিতর্ক। নারদা। হায় রে বঙ্গজ মিডিয়া। কেন এত বছর সিবিআই ঘুমিয়ে ছিল, সেই নিয়ে তো খুব বেশি সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। মন্ত্রীরা, সাংসদরা এতদিন ডাঁহা মিথ্যে বলে গেছেন। বলেছিলেন, এই ভিডিওগুলো জাল। কিন্তু পরে বলছেন, চাঁদা নিয়েছি। তাহলে, সেদিনের সেই মিথ্যাচার! পুরানো সেই ফুটেজগুলো কোথায় হারিয়ে গেল, কে জানে!
এবারেও সিবিআই হানা আর ধর্নার মাঝে মস্তবড় একটা বিষয় হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমন কোনও উচ্চবাচ্য দেখা যাচ্ছে না। যখন নিজাম প্যালেসে এইসব কাণ্ড চলছে, তখন রাজ্যের একদল মন্ত্রী ছুটলেন নগর দায়রা আদালতে। সেই তালিকায় যেমন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক আছেন, তেমনি আছেন আরও দুই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুজিত বসু। সূত্রের দাবি, এঁরা বিচারকের সঙ্গে দেখা করেন। ঠিক কী আলোচনা করেছেন, তার কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত যে তাঁরা চিংড়িমাছের মালাইকারি নিয়ে বা রবীন্দ্রনাথের পল্লিচিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে যাননি। ভেতরে কী আলোচনা হয়েছে, কী ভাষায় এরা কথা বলেছেন, সেটা বোঝার জন্য বিরাট কোনও ফেলু মিত্তির বা ব্যোমকেশ বক্সি হওয়ার দরকার পড়ে না। এঁদের যা শিক্ষাদীক্ষা, এদের যা রুচি, এঁদের যা অতীতের কর্মকাণ্ড, তাতে এঁরা কী বলতে পারেন, সহজেই অনুমেয়।
বিচারপ্রক্রিয়া হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। খোদ অভিযুক্তরাই আদালতে নেই। দুই পক্ষের আইনজীবীরাও আদালতে নেই। তাহলে দল বেঁধে এই তিন মন্ত্রী আদালতে গেলেন কেন? ফল কী হল, সন্ধেবেলায় পরিষ্কার হয়ে গেল। এত দাবড়ানি খেয়ে স্থানীয় আদালতের বিচারক কী রায় দেবেন, মোটামুটি জানাই ছিল। ঠিক সেটাই হল। কেন লোয়ার কোর্টের রায় একপেশে হয়, এটা তার ছোট্ট একটা নমুনা।
তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন, এই কারণে চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হল। আর যাঁরা জোর খাটিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করলেন, তাঁদের কেন গ্রেপ্তার করা হবে না। বিচারকের সঙ্গে এই কীর্তিমানদের কী কথা হয়েছিল? বিচারকের ঘরে নিশ্চয় সিসিটিভি থাকবে। সেই ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে। যদি কথা পরিষ্কার শোনা নাও যায়, এঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকেই বোঝা যাবে। কিন্তু সিবিআই কি সেই তৎপরতা দেখাবে? আইন কী বলবে, জানি না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চাঁদা নিয়ে এই চার অভিযুক্ত যত না অপরাধ করেছেন, সচেতনভাবে বিচারককে প্রভাবিত করতে গিয়ে এই তিন মন্ত্রী তার থেকে ঢের বেশি অপরাধ করেছেন। অথচ, এমন একটা মৌলিক প্রশ্ন টিভির সান্ধ্য মজলিশে উঠেই এল না।