বামেদের যে এত শুভাকাঙ্খী, এই কলমচিদের না দেখলে জানাই যেত না

কুণাল দাশগুপ্ত

‌মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধান। ভোল বদলে গেল সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় পাতার। ভোটের আগে যে কমিউনিস্ট পার্টিকে লাল কার্ড দেখিয়ে ছিল সংবাদপত্রগুলো, ভোট মিটতেই সেগুলো লালে লাল। বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম শূন্য পাওয়ার পরই কলমচিদের কিচিরমিচির শুরু হল। ব্যর্থপ্রেমিক রাজেশ খান্নার করুণ কান্না মাখামাখি শুরু হল উত্তর সম্পাদকীয়গুলিতে। কেন সিপিএম শূন্য? তাঁদের যেন চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না।
আরে মশাই, বামেরা শূন্য তো আপনাদের কী? আপনারা কি খুব দুঃখ পেয়েছেন বামশক্তি বিপর্যস্ত হয়েছে বলে? দেখে তো মনে হচ্ছে আপনাদের পুত্র-কন্যারা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে শূন্য পেলেও এতটা বিচলিত হতেন না। বাম বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার দমবন্ধ করা প্রতিযোগিতা। চেরাপুঞ্জিতে প্রতি বছর মোট যত সেন্টিমিটার জল জমে তার চেয়েও বেশি জায়গা খরচ করেছেন এই ক’দিনে। অথচ দেখুন গত বছর করোনাকালে অন্যরা যখন দুর্নীতির রিলেরেস চালাচ্ছিল, আপনাদের অন্ধ নৈতিকতা ধৃতরাষ্ট্র হয়ে ঠোক্কর খাচ্ছিল। বাম কর্মীদের জীবন তুচ্ছ করে মানুষের পাশে থাকা চোখে পড়েনি। চোখে পড়েনি এক বছর ধরে গোটা রাজ্যে কমিউনিটি কিচেন, শ্রমজীবি ক্যান্টিন চালিয়ে যাওয়াও। অদ্ভুত ছানিরত্নম কলমচিরা।
ডান দিকের দুর্নীতিও এদের দূরবীনে ধরা পড়ে না, বাঁদিকের সমাজ সেবাও না। দীর্ঘ সময় ধরে বাম নেতাদের বক্তব্য, বাম আন্দোলনে চেপে গেছেন। প্রাক্তন মেয়রের পরকীয়া সম্পর্ক প্রাইম টাইমে যতখানি গুরুত্ব পেয়েছে, তার পাঁচ শতাংশ জায়গাও পায়নি কৃষকদের আন্দোলন বা এসএসসি দুর্নীতি। রাম আর হনুমান যতখানি জায়গা পেয়েছে, তার দশভাগ জায়গাও বরাদ্দ ছিল না ছাত্র, যুবদের সমস্যা ও আন্দোলনের জন্য। কই, তখন তো এই কেঁদে ভাসানো বুদ্ধিজীবীদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়নি।

left front10
আজ ‘বুদ্ধিদীপ্ত’ সমালোচনা করতে গিয়ে বলছেন, সিপিএম ‘‌বিজেমূল’‌ নামে ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। যখন বামেরা শাসন করেছে আপনারা বিরোধীদের তালে তাল মিলিয়ে কংগ্রেসকে লাগাতার তরমুজ বলেছেন। তরমুজ সত্যি হলে বিজেমূল সত্যি হবে না কেন? যে মুখ্যমন্ত্রীরা দাঙ্গার সময় রঙ না দেখে প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দেন, বলেন দাঙ্গা করতে এলে মাথা গুড়িয়ে দেওয়ার কথা। তারা সাম্প্রদায়িক। আব্বাসের সঙ্গে জোট করার জন্য। আর সিদ্দিকুল্লার সঙ্গে দহরমহরম ধর্মনিরপেক্ষতা! দুর্গাপুজোয় ১৩০কোটি টাকা দেওয়া বা ইফতেহারে গিয়ে ধর্মের ভোজবাজিও ধর্ম নিরপেক্ষতা।
লেখকরা আরও বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ক্রমাগত ব্যক্তি আক্রমণ করছে সিপিএম। আরে বুদ্ধবাবুর গায়ে রক্তের দাগ লাগানো বা জ্যোতি বসুর পুত্র পুত্রবধূর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে কালিখরচ অশালীনতা নয়। মুখ্যমন্ত্রীর মুখনিসৃত লাগাতার ‘‌বাক্যালঙ্কার অব্যয়’ অশালীন নয়।‌ আসলে নীতি নৈতিকতা, শালীনতা, অশালীনতা-সবেরই শিক্ষার দায় নিয়ে বসে আছেন এঁরা। এখন বামপন্থার বিষয়ে বামপন্থীদের শিক্ষা দেওয়ার কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। যখন পঞ্চায়েতে প্রতিটি ব্লকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ব্লক অফিস ঘিরে রেখেছিল, যখন দল ভাঙিয়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে শামিল করার মহান কাজ চলছিল, তখন তো নীরব ছিলেন। তাহলে এখন এত মায়াকান্না কেন?‌
যাঁরা যে কলমে সিপিএমকে গাল দিচ্ছেন, তাঁরাই সেই কলম দিয়ে সিপিএমকে প্রাসঙ্গিক করে তুলছেন। সত্যিই, সিপিএম–‌কে জ্ঞান দেওয়া এখন কত সহজ। যে পারছে, জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে। বামেদের যে এত শুভাকাঙ্খী আছে, এই কলমচিদের লেখা না পড়লে জানাই যেত না। একটু ভেবে দেখুন, মার্কসবাদী কোচিং সেন্টার বলে কিছু একটা চালু করা যায় না। লিউ সাওচি পড়বেন আর পড়াবেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.