সিপিএম–‌কে জ্ঞান দেওয়া এখন খুব সহজ

রাজেশ পাত্র

যেদিকেই তাকান, সিপিএম–‌কে জ্ঞান দেওয়ার লোকের অভাব নেই। ইদানীং সেই জ্ঞান দেওয়া লোক অনেক বেড়ে গেছে। তাঁদের দেখা যায় পাড়ার চায়ের দোকানে, টিভির আলোচনায়, সংবাদপত্রের অফিসে। সিপিএমের কেন এমন হল, তাঁদের কী করা উচিত ছিল, কোথায় কী কী ভুল ছিল, তা নিয়ে কত জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। যেন সিপিএম নেতারা কিছুই বোঝেন না। যত বোঝেন, এই সবজান্তারা। এঁদের পরামর্শ মেনে চললেই হয়ত সিপিএম সরকার গড়ে ফেলত।

cpm

প্রথমত, এই জ্ঞানদাতারা কখনও রাস্তায় নামেননি। এমনকী নিজেকে সিপিএমের সমর্থক বলতেও এঁদের তীব্র আপত্তি। এঁরা যে বামেদের শুভাকাঙ্খী, এমনটাও কখনও মনে হয়নি। তাঁদের ফেসবুক পোস্টগুলো পড়ুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন এঁদের অবস্থান।

এতদিন এঁরা বলে আসছিলেন, সিপিএম তরুণদের সুযোগ দেয় না, বুড়োরা পদ ছাড়তে চায় না। এবার দেখা গেল, বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে প্রায় জনা পঞ্চাশেক প্রার্থী আছেন, যাঁদের বেশ তরুণ–‌যুবকই বলা চলে। প্রায় প্রত্যেকেই দারুণ শিক্ষিত, বিচক্ষণ, সুবক্তা। এঁদের সঙ্গে শিক্ষায়–‌দীক্ষায়, নম্রতায়, দায়বদ্ধতায় পেরে উঠবেন না বিপক্ষের প্রার্থীরা। এসকঙ্গে একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণকে আগে কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু যেই না তাঁরা হেরে গেলেন, অমনি শুরু হয়ে গেল জ্ঞান বর্ষণ। সেই বোদ্ধারা বলতে শুরু করেছেন, দলটাকে ডুবিয়ে বুড়োগুলো পালিয়ে গেল। কেউ বলছেন, এঁদের বলির পাঁঠা করা হল। অর্থাৎ, সুযোগ দিলেও মুশকিল, না দিলেও মুশকিল।

এতদিন বলত, সিপিএম কর্তৃত্ব ছাড়তে চায় না। অহেতুক ছুৎমার্গে ভোগে। যেই আব্বাসের সঙ্গে জোট হল, অমনি গেল গেল রব উঠে গেল। যেন আব্বাস সিদ্দিকির থেকে ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করলে ভাল হত। এখন এই সবজান্তারা বলতে শুরু করেছেন, আব্বাসের সঙ্গে জোট মানুষ মেনে নেয়নি। ২০১৮ তে তো আব্বাসের সঙ্গে জোট ছিল না। তাহলে শূন্যে নেমে যেতে হয়েছিল কেন?‌

এত বড় বড় মিছিল, সমাবেশ। মূলস্রোত মিডিয়ায় জায়গাই পায়নি। অথচ, এখন কেন বামেরা হারল, তা নিয়ে কত জায়গা!‌ কেউ একটু বেসুরো বললে তাঁর জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। এখন দরদ যেন উথলে উঠছে। আসলে, শূন্য বলে কথা। এত বিকৃত আনন্দ প্রকাশের সুযোগ কি বারবার আসে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.