বিজেপির এই ভরাডুবি প্রত্যাশিতই ছিল

অজয় কুমার

তিন থেকে সাতাত্তর। এই হিসেব দেখিয়ে কেউ কেউ বিজেপির নির্বাচনী সাফল্য দেখাতে চাইছেন। যারা লোকসভায় ১৮ আসন জিতেছে, শতাধিক আসনে এগিয়ে ছিল, যারা এবার অন্তত ২০০ আসন পাচ্ছে, এরকম একটা হাওয়া তুলেছিল, তারা যদি সাতাত্তরে থেমে যায়, সেটা সাফল্য নাকি ব্যর্থতা!‌ আশাভঙ্গ হলে এখন আঙুর ফল টকই মনে হবে। ছিলাম তিন, হলাম সাতাত্তর (‌যদিও পরে আরও ২টি আসন কমে যাবে)‌, এই বলেই মিথ্যে সান্ত্বনা খুঁজতে হবে।

বিজেপির সবথেকে ভাল ফল কোথায়?‌ একদিকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া। অন্যদিকে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি। এই ছয় জেলায় বেশিরভাগ আসন পেয়েছে বিজেপি। বাকি জেলাগুলোতে এই সাফল্য এল না কেন?‌ কেন এই আসনগুলোতে জিতেছে, সেটা বুঝতে পারলেই বোঝা যাবে, কেন অন্যান্য জেলায় জয় আসেনি।

bjp

প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা আর পরেরদিকের প্রার্থীতালিকার মধ্যে অনেক ফারাক। বিশেষ করে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রার্থীতালিকার দিকে চোখ বোলান। ১)‌ কোনও চিত্রতারকাকে পাঠানো হয়নি। ২)‌ কোনও ঠিকাদার বা ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করা হয়নি। ৩)‌ কলকাতা থেকে নেতাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। ৪)‌ দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তৃণমূল থেকে আসা লোকেরাও সেভাবে জায়গা পাননি। ৫)‌ বড় বড় তারকাদের এনে সভা বা রোডশো সেভাবে করাতে হয়নি। ৬)‌ নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তে না পড়তেই, প্রচার তুঙ্গে ওঠার আগেই এইসব এলাকায় ভোট হয়ে গেছে।

মূলত দলের লোকদেরই প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হয়ত তেমন পরিচিত নন, এলাকার অধিকাংশ ভোটার তাঁদের চোখেও দেখেননি। কিন্তু তারপরেও দিব্যি জিতে এসেছেন। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অনেকটা সেইরকম। যেমন আলিপুরদুয়ার। পাঁচটি কেন্দ্রের তিনটি এসটি, একটি এসসি সংরক্ষিত। ফলে, ভারী নাম দেওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না। অখ্যাতদের ওপরই ভরসা করতে হয়েছে। কোচবিহারের ক্ষেত্রেও নিশীথ প্রামাণিক ও মিহির গোস্বামী ছাড়া বড়সড় কোনও নাম নেই। জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রেও তাই, জিতেছেন মলত অখ্যাতরাই। এসব জায়গায় ফিল্মস্টারও পাঠাতে হয়নি, আবার তৃণমূল ভাঙিয়ে সেভাবে লোক আনতেও হয়নি। আদি বিজেপির পাল্লাই ভারী।

অথচ, অন্যান্য জেলায় এই বদরোগগুলো দেখা গেছে। অধিকাংশ আসনেই তৃণমূল থেকে আসা বাতিল লোকেদের প্রার্থী করা হয়েছে। যাঁরা পঞ্চায়েতে ভোট লুঠ করল, বিরোধীদের দাঁড়াতে দিল না, তাঁরা যদি বিজেপির মুখ হয়ে ওঠে, মানুষ মেনে নেবে?‌ লোকসভায় মানুষ যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, এই সহজ সত্যিটাই ভুলে গেলেন বিজেপি নেতারা। এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন, এখন থেকে কে পঞ্চায়েতে প্রধান হবেন, কে পঞ্চায়েত সমিতির কোন আসনে লড়বেন, কে কোন দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ হবেন, সেই অলিখিত ভাগ বাটোয়ারাও হয়ে গেল। হাওয়া দিয়ে একবার, দুবার হয়, বারবার হয় না, এই সহজ সত্যিটা বুঝে ওঠার মতো লোক কোথায়?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.