শুভেন্দুর পায়ে শিকল না দিলেই নয়

সুমিত চক্রবর্তী

এবার মিডিয়ার জোর গুঞ্জন, কে হবেন বিরোধী দলনেতা?‌ একটা সহজ প্রশ্ন। উত্তরটাও ততোধিক সহজ। কিন্তু কোনও কোনও মিডিয়া এটাকে অহেতুক জটিল করে দেখাতে চাইছেন।

শুভেন্দু অধিকারী যে বিরোধী দলনেতা হতে চলেছেন, এটা নিয়ে কোনও সংশয় থাকার কথা নয়। যাঁরা রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতির সামান্যতম খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে কোনও সংশয় নেই। সত্যি করে বলুন তো, শুভেন্দু ছাড়া আর কার নাম নিয়ে আলোচনা চলতে পারে!‌ আর কাউকে বিরোধী নেতা হিসেবে ভাবা যায়!‌

অনেকে মুকুল রায়ের নাম ভাসিয়ে দিচ্ছেন। যাঁরা মুকুল রায়কে একটু হলেও চেনেন, তাঁরা খুব ভালভাবেই জানেন, এই পদের প্রতি তাঁর কোনও মোহই নেই। মুকুল রায় চাইলে তৃণমূলের সুবর্ণ সময়ে বিধায়ক বা মন্ত্রী হতে পারতেন না!‌ রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন, সেই সুবাদে মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যে বিধায়ক বা মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা কখনই করেননি। তিনি কিংমেকার হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। তাঁর পছন্দের লোকেরা প্রার্থী হবেন, তাঁর পছন্দের লোকেরা মন্ত্রী হবেন, এতেই তাঁর আনন্দ। নিজে সেই ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখানোর চেষ্টা করেননি।

চাইলে গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি কি বিজেপির টিকিট পেতে পারতেন না?‌ টিকিট পেয়ে জিততেন কিনা, সে অন্য প্রশ্ন। তবে চাইলে টিকিট যে পেতেন, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু নির্বাচনী লড়াই থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছিলেন। এবারও বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল বলে মনে হয় না। অমিত শাহ জোর করে প্রার্থী করতে চাইছেন, তাঁকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ‘‌হ্যাঁ’‌ বলতে হয়েছে। দল ক্ষমতায় এলেও নিশ্চিতভাবেই তিনি মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকতেন না। সেই মুকুল রায় বিরোধী দলনেতা হওয়ার জন্য তদ্বির করবেন, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। এই লড়াই থেকে তিনি অনেক দূরে।

মিলিয়ে নেবেন, মুকুল রায় বিধানসভাতেও খুব একটা যাবেন না। অনেকটা সোমেন মিত্রর মতোই তাঁর ভূমিকা হবে। সোমেন মিত্র নামেই বিধায়ক হতেন। বিধানসভাতে আসতেন না। কোনও কমিটিতেও থাকতেন না। মুকুল রায়ের ভূমিকাটাও প্রায় সেরকমই হবে। তিনি বাজেটে অংশও নেবেন না। কমিটি মিটিংয়েও খুব একটা আসতে দেখা যাবে না।

subhendu

অর্থাৎ, মুকুল রায়ের নামটা এখানেই কাটা গেল। তাহলে আর কে বাকি থাকলেন?‌ কেউ কেউ মনোজ টিগ্গার কথা ভাসাচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ বিধানসভা থেকে পদত্যাগের পর তিনি দলনেতা হয়েছিলেন, এটা ঘটনা। কিন্তু সেটা ছিল ৬ জনের পরিষদীয় দল। ৬ জনের নেতা আর ৭৫ জনের নেতা এক হল?‌ তাছাড়া, শুভেন্দু ছাড়া ধারে–‌ভারে আর কাউকে ওই পদে বসানো যাবে?‌ বালুরঘাট থেকে জিতেছেন অশোক লাহিড়ী। বিজেপি জিতলে তিনি হয়ত অর্থমন্ত্রী বা শিল্পমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তাই বলে বিরোধী দলনেতা কখনই হতে চাইবেন না। তিনিও বেশিরভাগ সময় দিল্লিতেই থাকবেন। কালেভদ্রে বিধানসভায় আসবেন। নিশীথ প্রামাণিক বা জগন্নাথ সরকারের মতো সাংসদরা জিতলেও তাঁরা লোকসভার আসনই ধরে রাখবেন। বিধানসভায় পাও রাখবেন না। তাহলে শুভেন্দু ছাড়া আর রইলেন কে?‌ তাছাড়া, শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা না করলে তিনি যে আবার তৃণমূলে পা বাড়াবেন না, তার গ্যারান্টি আছে?‌ বিজেপির পক্ষে তাঁকে ধরে রাখাটাও জরুরি। ধরে রাখতে গেলে অন্তত পায়ে এই শিকলটা দিতেই হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.