মেরুকরণ ব্যুমেরাং হয়ে উঠবে না তো!‌

সুমন্ত সেন

ভোটে অঙ্ক বড় একটা ফ্যাক্টর। কোন অঙ্ক কোথায় ক্লিক করে যাবে, কেউ বলতে পারবে না। বাংলা দখলের জন্য এবার জোর কদমে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূল থেকে দল ভাঙিয়ে একের পর নেতাকে দলে নিচ্ছে। চিত্রতারকা থেকে খেলোয়াড়দের দলে টানার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে হয়ত অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু এসবের থেকেও যেটা বেশি করে করতে চাইছে, তা হল ধর্মীয় মেরুকরণ।

বিজেপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে পরিষ্কার, ধর্মের ভিত্তিতে ভোট বিভাজন করতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী। মোদ্দা কথা, মমতাকে সংখ্যালঘু দরদি হিসেবে প্রতিপন্ন করো। মমতা সংখ্যালঘু তোষণ করছেন, মমতা জিতলে সংখ্যালঘুদের আরও বাড়বাড়ন্ত হবে, এই মর্মে প্রচার চালিয়ে যাও। তাহলে, হিন্দুদের বড় অংশের ভোট বিজেপির বাক্সে পড়বে। লোকসভায় এই তাস খেলে বিজেপি কিছুটা সফলও হয়েছিল।

vote8

কিন্তু এবার সেই টোটকা বু্মেরাং হয়ে ফিরে আসতেই পারে। সবথেকে বেশি সংখ্যালঘু মানুষ কোন কোন জেলায় বাস করেন?‌ মালদা ও মুর্শিদাবাদ। পাঁচ বছর আগেই এই দুই জেলায় তৃণমূলের ফল অত্যন্ত খারাপই হয়েছিল। মালদার ১২ আসনের মধ্যে তৃণমূল একটিতেও জেতেনি। মুর্শিদাবাদের ২২টি আসনের মধ্যে জিতেছিল মাত্র চারটিতে। তার মানে, এই দুই জেলা মিলিয়ে ৩৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে মাত্র চারটি আসনে। তাহলেই ভেবে দেখুন, যে দল ২৯৪ এর মধ্যে ২১০ আসন পায়, সেই দল এই দুই জেলায় ৩৪ আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসন পায়। এই হিসেব থেকে পরিষ্কার, সংখ্যালঘু ভোট মানে সেটা তৃণমূলে যাবে, এমন কথার পেছনে কোনও যুক্তি নেই, অঙ্কও নেই।

কিন্তু বিজেপি ক্রমাগত তাঁকে মুসলিম দরদি বলে প্রচার করে চলেছে। মুসলিমদের নামে ক্রমাগত কটূক্তি করে চলেছে। এর ফল মারাত্মক হতে পারে। সত্যি সত্যিই মুসলিম ভোটের বড় একটা অংশ নিরাপত্তার জন্য তৃণমূল শিবিরে ভিড়তে পারে। তাদের মনে হতেই পারে, বিজেপিকে কেউ ঠেকাতে পারলে তৃণমূল পারবে। অতএব, তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আর হিন্দু ভোটের দিকে বিজেপির যতই লক্ষ্য থাকুক, হিন্দু ভোট কখনই এক জায়গায় পড়বে না। শাসক দল হিসেবে এমনিতেই কুড়ি–‌পঁচিশ পার্সেন্ট তৃণমূল পাবে। তার মানে মুসলিম ভোট যদি তিরিশ শতাংশের মধ্যে পঁচিশ শতাংশও পাওয়া যায়, আর হিন্দু ভোট বাকি পচাত্তর পার্সেন্টের মধ্যে পঁচিশ পার্সেন্ট। মোদ্দা কথা, অঙ্কের এই স্বাভাবিক নিয়মেই তৃণমূল জিতে যাবে। সুতরাং, এই মেরুকরণের বড় মাশুল হয়ত বিজেপিকেই দিতে হবে।

(‌এটি ওপেন ফোরাম। যে কেউ নিজের বক্তব্য তথ্য ও যুক্তিসহ তুলে ধরতে পারেন। মতামতের দায় একান্তই সেই লেখকের। আপনিও চাইলে আপনার যুক্তি ও ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.