জাভেদ খানের গোপন চিঠি শতরূপকে

কসবায় ভোট পর্ব শেষ। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় তো চলছে। তাই শতরূপ ঘোষ চষে বেড়াচ্ছেন নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই খবর এল, তাঁর করোনা হয়েছে। ঠিক এই সময়ে জাভেদ খান যদি তাঁকে চিঠি লিখতেন!‌ কী হতে পারত সেই চিঠির বয়ান! জাভেদ খানের মন কী বাত জেনে সেই চিঠির খসড়া লিখে ফেললেন স্বরূপ গোস্বামী। ‌

স্নেহের শতরূপ,

একটু আগেই শুনলাম তোমার করোনা হয়েছে। খুব ইচ্ছে ছিল, তোমার বাড়ি যাই। একটু গল্প করে আসি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কারও বাড়ি যাওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না। তাছাড়া, কোন মুখে যাই। এবার ভোটে যা যা হয়েছে, তারপর কি সত্যিই তোমার বাড়ি যাওয়ার মুখ আছে!‌

আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন নেই। এত সময় কোথায়?‌ মন্ত্রীত্বে তেমন ব্যস্ত নই ঠিকই, কিন্তু এলাকা ধরে রাখা কি কম ব্যাপার!‌ কত লোকের কত আবদার। অন্যায় আবদারের তো সীমা নেই। এসব মেটানো কী চাট্টিখানি কথা!‌ তুমি বাচ্চা ছেলে। ও তুমি বুঝবে না।

কী হবে এবারের ভোটে?‌ আমার খুব একটা টেনশন নেই। আগের দু’‌বার যা হয়েছে, এবারও তাই হবে। অর্থাৎ, আমিই জিতব। আগের থেকে অনেক বেশি মার্জিনেই জিতব। তবে, তোমার কাছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তুমি জিতে নিয়েছো হৃদয়। তোমার লড়াইকে তাই আবার কুর্নিশ জানাই।

পাঁচ বছর আগের কথা মনে আছে?‌ ছটা ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটা ওয়ার্ডে তুমি এগিয়ে। তবু দিনের শেষে জয়ীর বরমাল্য জুটেছিল আমার গলায়। একা তোপসিয়াই উতরে দিয়েছিল। কীভাবে সেই ভোট হয়েছিল, আমিই জানি। তুমিও কি জানো না?‌ বেশ ভালই জানো। বিশ্বাস করো, এছাড়া কোনও উপায় ছিল না। বাকি পাঁচটা ওয়ার্ডে আমি যে পিছিয়ে থাকব, আমি নিজেও জানতাম। আবার তুমি যে খুব বেশি এগিয়ে থাকবে না, এটাও জানতাম। ফলে, আমার হাতে একটাই তুরুপের তাস, তোপসিয়া। যা করার, ওখানেই করতে হবে। সোজা পথে হবে না, এটাই বুঝেছিলাম। তাই বাঁকা পথই নিতে হয়েছিল। আরে বাবা, এত বছরের প্রোমোটিং, এত কালো টাকা। সে যদি আসল সময়েই কাজে না এল, তা হলে কী লাভ!‌

এবার নিশ্চিত ছিলাম কেন জানো?‌ বাজারে নতুন একটা হাওয়া এসেছে বিজেপি। আগেরবার সেই হাওয়া জোরালো ছিল না। ফলে টক্কর হয়েছিল তোমার সঙ্গে আমার। এবার বিজেপি মেরুকরণ করতে চাইল। তাতে আমার সুবিধেই হল। তোপসিয়া তো আমার রইলই। মাঝখান থেকে ওই পাঁচটা ওয়ার্ডে ভোট দু’‌ভাগ হবে। সোজা অঙ্ক। বাকি পাঁচটা ওয়ার্ডের ভোট যদি তোমরা ভাগাভাগি করে নাও, শুধু তোপসিয়া দিয়েই আমি ড্যাং ড্যাং করে বেরিয়ে যাব।

shatarup10

গত পাঁচ বছরে তোমার পরিচিতি অনেক বেড়েছে। গোটা রাজ্যজুড়ে তোমার লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার। দু–‌দুবার ভোটে হেরেও এত মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায়!‌ সেখানে আমি!‌ টানা তিনবারের বিধায়ক। দু’‌বারের মন্ত্রী। অঢেল টাকা পয়সা। দেশ বিদেশে কত সম্পত্তি, নিজেই জানি না। তবু আমাকে এই এলাকার বাইরে তেমন কেউ চেনে না। গোটা রাজ্যে তুমি যতখানি পরিচিত, আমি তার সিকিভাগও নই। সত্যিই, মাঝে মাঝে তোমাকে ঈর্ষা হয়। টিভি চ্যানেলে মাঝে মাঝেই তোমাকে দেখি। কী যুক্তিনিষ্ঠ কথাবার্তা। কী মার্জিত আচরণ। তোমার পিঠ চাপড়ে দিতে ইচ্ছে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার ছেলেটা কেন এমন হয় না!‌ আমি সোশ্যাল মিডিয়া বুঝি না। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার নানা ফুটেজ দেখি। বিভিন্ন জায়গায় তোমার বক্তৃতা শুনি। মুগ্ধ হয়ে যাই। এই ছেলেটাকে আমি হারিয়েছি!‌ বিশ্বাসই হয় না।

সত্যিই শতরূপ, বিধানসভায় তোমার মতো ছেলেদেরই যাওয়া উচিত। যারা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে। যারা নিজের এলাকার দাবিটা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে জানে। যারা হিন্দু–‌মুসলিম তর্কে ভেসে যায় না। তার আড়াল থেকে আসল ইস্যুগুলো তুলে আনতে জানে। আমি নিরপেক্ষ ভোটার হলে তোমাকেই ভোট দিতাম। কিন্তু কী আর করা যাবে!‌ আমি তো নিছক ভোটার নই, প্রার্থী। তার ওপর দাপুটে প্রার্থী। তোমার কাছে হেরে গেলে আমার সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। তা তো হতে দিতে পারি না। তোমার বিদ্যে আছে, বুদ্ধি আছে, সততা আছে, লড়াই আছে, এত এত ফলোয়ার আছে। আমার ছেলের তো এসব কিছুই নেই। বাপের রেখে যাওয়া সাম্রাজ্যই তার প্রথম ও শেষ আশ্রয়। সেই সাম্রাজ্যই যদি ভেঙে পড়ে, সে বেচারা যাবে কোথায়!‌

তাই আমাকে আমার মতো করেই লড়তে হয়েছে। সব সিক্রেট তোমাকে বলছি না। শুধু জেনে রেখো, সে পথ বড় অন্ধকার পথ। ২ মে জিতব। আবার হয়ত মন্ত্রিত্বের শপথ নেব। কিন্তু মনে মনে জানি, এই জয় আমার নয়। এ মণিহার আমায় নাহি সাজে। কিন্তু মুখে সে কথা বলতে পারব না। মুখে বলব, ‘‌এই পাকা ছেলেটা, এর নাকি এত এত ফলোয়ার। একে পরপর তিনবার হারিয়েছি।’‌ এই ঠুনকো অহঙ্কার নিয়েই আমাকে বাঁচতে হবে।

করোনায় তোমার কিচ্ছু হবে না। মনকে শক্ত করো। এটাকে স্টাডি লিভ হিসেবে ব্যবহার করো। ভাল ভাল বই পড়ো। ভাল সিনেমা দেখো। টিভিতে তোমাকে আরও ক্ষুরধার দেখতে চাই। তুমি যুক্তির বিন্যাসে অন্যদের ছাপিয়ে যাবে। আর আমি পারিষদদের বলব, ‘‌এই ছেলেটাকে আমি হারিয়েছি।’‌ পাঁচ বছর পরে কী হবে, সে পরে দেখা যাবে। তখন আবার আস্তিন থেকে তাস বের করব। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত আমি তোমার শুভাকাঙ্খী, আমাকে এটুকু বিশ্বাস করতে পারো।

নিজের যত্ন নিও, ভাল থেকো।

ইতি
জাভেদ খান

(‌এটি নিছকই কাল্পনিক চিঠি। বাস্তবে জাভেদ খান এমন কোনও চিঠি লেখেননি। কিন্তু লিখতেই পারতেন।)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.