হেমন্ত রায়
এতদিন টিভি খুললেই ছিল ভোটের কীর্তন। সুস্থ আলোচনা নয়। কে কত কাদা ছুঁড়তে পারে, যেন তার প্রতিযোগিতা। এ ওকে চোর বলছে। ও তাকে গদ্দার বলছে। আর জেলায় জেলায় হিংসা, সন্ত্রাস— এসব তো আছেই।
ভোটের গান কিছুটা থেমেছে। এখন শুরু হয়েছে করোনার কীর্তন। সারাক্ষণ সেই করোনা করোনা করে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ঘরে বসে সবাই গিলছে। কোথায় বেড নেই। কোথায় রোগী রাস্তায় পড়ে আছে। কোথায় গণচিতা জ্বলছে। সন্ধে থেকে যারা সিরিয়াল গিলত, তারা এখন করোনা গিলছে।
এই অবস্থায় কিছুটা হলেও মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে আইপিএল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই ভয়াবহ আবহে আইপিএল চালিয়ে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে? আমার মনে হয়, খুব একটা ক্ষতিও হচ্ছে না। খেলোয়াড়রা যথেষ্ট সুরক্ষিত আছেন। নিয়ম ও সুরক্ষাবিধি মেনেই খেলা হচ্ছে। মাঠে দর্শকও নেই। ফলে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তেমন আশঙ্কাও নেই। ক্রিকেটাররা যদি কোনও কারণে সংক্রমিত হয়েও পড়েন, দ্রুত তাঁদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। বোর্ড যে ব্যবস্থা করে রেখেছে, আশা করি তাঁদের অক্সিজেন পেতে বা বেড পেতে সমস্যা হবে না। ধরে নেওয়াই যায়, একজন ক্রিকেটারের ইমিউনিটি অন্যদের থেকে অনেকটাই বেশি। ফলে, সংক্রমণ হলেও তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
এই অবস্থায় সন্ধেবেলায় আইপিএল যদি মানুষকে কিছুটা হলেও সুস্থ বিনোদন উপহার দেয়, মন্দ কী? সবাই যে আইপিএল দেখবেন, এমন নয়। কিন্তু অনেকেই তো দেখবেন। সেই সংখ্যাটা খুব কম নয়। তাছাড়া, আরও একটা দিক আছে। রামবাবু আইপিএল দেখছেন মানে বাড়ির অন্যরা আইপিএল না দেখুক, অন্তত টিভিতে করোনা সমাচার গিলতে হচ্ছে না। ভয়ের বাতাবরণ থেকে একটু হলেও দূরে থাকছেন।
একেবারে সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সন্ধেবেলায় যদি আইপিএল না হত, দেশের বিরাট অংশের মানুষ হয়ত পাগল হয়ে যেতেন। সারাক্ষণ করোনার সম্প্রচার, করোনার আলোচনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেন। সেখানে আইপিএল অনেকটাই টাটকা অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে।