স্মৃতিটুকু থাক
আমি সেবার উচ্চমাধ্যমিক দেব। ফেলুদার অনেক গল্পই পড়ে ফেলেছি। বেশি ভাল লাগত তোপসেকে। কারণ, সে আমারই বয়সি। বারবার মনে হত, ফেলুদা ছাড়া তোপসে নিজে কবে সমাধান করবে? একবার নন্দনে গিয়েছিলাম। দেখলাম, সত্যজিৎ রায় বেরিয়ে আসছেন। পরনে পাজামা আর পাঞ্জাবি। খুব গম্ভীর। এত কাছে ফেলুদার স্রষ্টা! নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।
কাছে যেতে খুব ভয় করছিল। তবু কী মনে হল, কাছে চলে গিয়ে প্রণাম করলাম। উনি হাসলেন। বললাম, আমি তোপসের খুব ভক্ত। উনি বললেন, হঠাৎ তোপসে! ফেলুদা নয় কেন? আমি বললাম, তোপসে আমার বয়সি। ওর সাফল্যকে নিজের সাফল্য মনে হয়। ওর চিন্তার সঙ্গে আমার চিন্তা মিলে যায়। কিন্তু আমার একটা আবদার আছে। উনি বললেন, বলো। বললাম, তোপসে কি বড় হবে না? ওকে একা ছেড়ে দিন না। সে–ও কিছু সমাধান করুক।
এতটুকুও বিরক্ত হলেন না। উনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘তাহলে যে ফেলু একা হয়ে যাবে। তোপসে ছাড়া সে–ও যে অসম্পূর্ণ।’ তারপর আর কখনও দেখা হয়নি। দু’বছর পর পেলাম তাঁর মৃত্যুসংবাদ। আজ আমি পঞ্চাশের দোরগোড়ায়। পুত্র থাকলে সে তোপসের বয়সী হত। পরে কিংবদন্তি পরিচালকের অনেক ছবিই দেখেছি। কিন্তু সত্যজিৎ রায় বলতেই সেই দৃশ্যটা বারবার মনে পড়ে যায়।
রাতুল ভট্টাচার্য