রক্তিম মিত্র
অনেকে বলতেই পারেন, সাজানো ঘটনা। না, মোটেই তেমনটা নয়। মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই চোট পেয়েছেন। যতটা দেখাচ্ছেন, ততটা না হলেও কিছুটা তো পেয়েইছেন। তিনি দ্রুত চোট সারিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন, এটাই কাম্য।
কিন্তু মুশকিলটা হল, যে কোনও স্বাভাবিক ঘটনাকে অস্বাভাবিক করে তুলতে তাঁর জুড়ি নেই। মিডিয়াও তেমন, কিছু একটা পেলেই হল। সারাদিন ব্রেকিং নিউজের নামে হইচই, আর আলোচনার নামে কদর্য চিৎকার। কিছু একটা ঘটলেই খুনের চক্রান্ত বলতে তাঁর মুখে এতটুকুও আটকায় না। যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন এরকম অভিযোগ করাটা একটা রুটিনের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিলেন। সিপিএম খুন করতে চেয়েছিল, পুলিশ খুন করতে চেয়েছিল, এমন অভিযোগ যে কতবার এনেছেন, তার কোনও হিসেব নেই। পুরনো কাগজের ফাইল ঘেঁটে এ নিয়ে একটা গবেষণা হতেই পারে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও সেই স্বভাবটা পাল্টায়নি। কখনও বলেছেন, কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার আমাকে খুন করতে চেয়েছে। কখনও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে খুনের চক্রান্ত করেছেন। কখনও বলেছেন, কংগ্রেস–সিপিএম–বিজেপি প্ল্যান করে খুন করতে চেয়েছিল। কখনও বলেছেন, বিমানের পাইলটকে দিয়ে খুন করানোর চেষ্টা হয়েছে। যা মুখে আসে, তাই বলে যান। একবার তাঁর বিমান নামতে কিছুটা দেরি হল। এমনটা হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি এর মধ্যে দেখে ফেললেন খুনের চক্রান্ত। তিনি ছাড়াও আরও অনেক যাত্রী ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনা হলে তো সবাই মারা যেতেন। তার থেকেও বড় কথা, বিমান দুর্ঘটনা হলে পাইলট নিজেই কি বাঁচতেন? একজন পাইলট তাঁকে মারার জন্য নিজে মরতে যাবেন? সেই পাইলট কি আত্মঘাতী জঙ্গি?
কিন্তু দিনের পর এই এই জাতীয় অবান্তর অভিযোগ করে গেছেন। মিডিয়াও ফলাও করে দেখিয়ে গেছে। নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়, মুখ্যমন্ত্রী অহেতুক হাওয়া গরম করতে চাইছেন। সস্তা সহানুভূতি কুড়োতে চাইছেন। তাঁর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বাইরে থেকে তিন–চারজন ঢুকে গেল, তাঁকে ধাক্কা মারল! তাহলে সিকিউরিটি অফিসাররা কী করছিলেন? তাঁদেরই তো আগে সরানো দরকার। আসলে, তিনি বরাবরই হুল্লোড় ভালবাসেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ দেখানোর কী নির্লজ্জ হুড়োহুড়ি চলে, সে তো বিভিন্ন সভায়, মিছিলে হামেশাই দেখা যায়। এমনকী, রাতে যখন তাঁকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে, তখনও সেই মুখ দেখানোর হ্যাংলামি আর হুড়োহুড়ি। এই হুড়োহুড়ি থেকে যে কোনও সময় পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হয়ত সেটাই হয়েছে। এই অত্যুৎসাহীদের নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি।
যেটা হয়েছে, সেটা একটা সামান্য দুর্ঘটনা বলা যেতে পারে। চোটটাও মিথ্যে নয়। কিন্তু মুশকিলটা হল তিনি নিজেই আগাম নিদান হেঁকে দেন। তিনি যদি বলেন, এখানে চোট, ওখানে চোট, কোন ডাক্তারের সাধ্যি আছে সত্যিটা বলবেন? তিনি যদি বলে হাড় ভেঙেছে, ডাক্তারকেও তাই বলতে হবে। তিনি যদি বলেন, মাথায় চোট, ডাক্তারকেও তাই বলতে হবে। ডাক্তারকে দিয়ে এসব বলিয়ে নেওয়ার জন্য নির্মল মাজি অ্যান্ড কোং তো আছেই। আর তিনি যদি বলেন, হামলা হয়েছে, পুলিশকেও তাই বলতে হবে। বাংলার অধিকাংশ মিডিয়াকেও তাই বলতে হবে।
সমস্যা অনেক গভীরে। একজনের একটা ছোট্ট মিথ্যে ঢাকতে কত লোককে মিথ্যে বলতে হয়।