‌এই দীনেশ বাজাজরাই তৃণমূলের সম্পদ

সরল বিশ্বাস

তৃণমূলের তালিকা তখন বেরিয়ে গেছে। কেউ টিভির সামনে কাঁদতে শুরু করেছেন। কেউ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। কোথাও রাস্তা অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। সত্যিই তো, মানুষের হয়ে কাজ করার কত তাড়না!‌ এতদিন এঁরাই বলতেন, তাঁরা নেত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত। তাঁরা নেত্রীর পাশে থেকে বাংলার সেবা করতে চান। সেবার এমন মহিমা, টিকিট না পেতেই কঙ্কালসার বেরিয়ে পড়ল।

হঠাৎ রাতের দিকে অন্য একটা দৃশ্য চোখে পড়ল। হন্তদন্ত হয়ে মুকুল রায়ের বাড়িতে ছুটলেন দীনেশ বাজাজ। এমনই হন্তদন্ত দৌড় দেখা গিয়েছিল রাজ্যসভা নির্বাচনের সময়। সেবারও শেষমুহূর্তে হন্তদন্ত হয়ে মনোনয়ন দিতে বিধানসভায় ছুটেছিলেন। জিততে হলে যতজন বিধায়ক দরকার, তার সিকিভাগও নেই। তবু তিনি দাঁড়াতে রাজি হয়ে গেলেন। কী এমন যাদুমন্ত্র ছিল যার ভরসায় দাঁড়িয়ে গেলেন। সহজ কথা, ভেবেছিলেন বিরোধী বিধায়কদের বড় অঙ্কের টোপ দিয়ে কিনে নেবেন। হ্যাঁ, সেইজন্যই তাঁকে মনোনয় দিয়েছিলেন নেত্রী। কিনে নেবেন এই ভরসায় দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন দীনেশ। হ্যাঁ, এরাই ছিলেন বড় ভরসা।

dinesh bajaj

দীনেশজি নিশ্চিত ছিলেন, এবার এতগুলো আসন। কোথাও না কোথাও ঠিক টিকিট পাওয়া যাবে। কিন্তু হায়!‌ শিঁকে ছিঁড়ল না। অতএব তিনি ছুটলেন মুকুল রায়ের ডেরায়। রাখঢাক না রেখেই জানালেন, এবার কী করা যায়, মুকুলদার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করব। এতদিন ‘‌মুকুলদা’‌র কথা মনে পড়েনি। যেই টিকিট জুটল না, অমনি মনে পড়ল।

মনে পড়ে যাচ্ছে কুড়ি বছর আগের একটা ঘটনা। সেবার ছিলেন দীনেশজির বাবা সত্যনারায়ণ বাজাজ। মারোয়াড়ি সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন দলকেই চাঁদা দিতেন। কলিমুদ্দিন শামস তাঁকে ধরে আনলেন ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে। অশোক ঘোষের কাছে আবদার করলেন, বাজাজ সাহেবকে টিকিট দিতে হবে। তিনি নানা সময়ে দলকে সাহায্য করেন। অশোক ঘোষ দেখলেন, জোড়াসাঁকোয় এমনিতেই জেতা কঠিন। বাজাজজি যদি জিততে পারেন, ভালই। বাম তালিকায় তাঁর নাম ঘোষণা হয়ে গেল। পুরোদমে প্রচারও শুরু করে দিলেন। দেওয়াল ভরে উঠল সত্যনারায়ণ বাজাজের নামে। নেতাজির আদর্শ, বামপন্থী আদর্শ কতকিছু শোনা গেল।

কদিন পর তৃণমূলের তালিকা বেরোলো। দেখা গেল, সেখানেও সত্যনারায়ণ বাজাজের নাম। তিনি রাতারাতি ভোল বদলে বাম থেকে তৃণমূল হয়ে গেলেন। আগেরদিনও যিনি বামেদের হয়ে প্রচার করেছেন, পরের দিন থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে শুরু করে দিলেন। দেওয়ালে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতীক মুছে আঁকতে লাগলেন ঘাসফুল। এমনটা বাংলার রাজনীতিতে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এমনকী পরেও দেখা যায়নি।

ভারি চমৎকার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সত্যনারায়ণ বাজাজ। বলেছিলেন, আমি ব্যবসায়ী মানুষ। সেই ব্যবসায় টাকা ঢালি, যে ব্যবসায় প্রোফিট আছে। বামেদের হয়ে দেখলাম, জিততে পারব না। তাই তৃণমূলে চলে এলাম। জেতা নিয়ে কথা। কোন দলের হয়ে জিতলাম, সেটা বড় কথা নয়। যে ব্যবসায় লাভ নেই, সেই ব্যবসায় টাকা ঢালব কেন?‌

দলবদলের এমন ব্যাখ্যা সত্যিই কখনও শোনা যায়নি। তবে একটা ব্যাপারে সাধুবাদ দিতেই হবে। তিনি অন্তত ন্যাকা ন্যাকা আদর্শের বুলি আওড়াননি। মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই মার্কা সস্তা কথা বলেননি। যেটা মনে করেন, সেটাই বলেছিলেন। দীনেশ বাজাজের হন্তদন্ত হয়ে মুকুল রায়ের বাড়ি ছুটে যাওয়ায় কুড়ি বছর আগের সেই ঘটনা মনে পড়ে গেল। দেখা যাক, দলবদলের পর দীনেশজি কোন অমৃতবাণী বর্ষণ করেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.