সরল বিশ্বাস
দুপুরেই হঠাৎ শোরগোল। দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করছেন। রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে এভাবে পদত্যাগ! কখনও ঘটেছে কিনা, জানা নেই। এখনও চার বছরেরও বেশি সময় ছিল। মাঝপথে কেন সরে দাঁড়ালেন!
খবরের ভাষায় বলা হয় জল্পনা। জল্পনার বিশেষ কিছু নেই। নিশ্চিতভাবেই বিজেপিতে যাবেন। তিনি ছবি আঁকতে যাবেন না। ফুটবল অ্যাকাডেমিও খুলবেন না। কোনও ধর্মীয় আশ্রমও নিশ্চয় খুলবেন না। রাজনীতিতেই থাকবেন। ক্ষমতার বৃত্তেই থাকবেন। গুজরাট না হোক অন্য কোনও রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় আসবেন। কেন্দ্রে মন্ত্রী হবেন। নিশ্চিত আশ্বাস না পেয়ে পদত্যাগ করার লোক তিনি নন।
কেউ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আবার কেউ বা কাছা খুলে আক্রমণ শানাচ্ছেন। প্রায় সব চ্যানেলেই তাঁকে নিয়ে সান্ধ্য আসর বসেছে। পরেরদিন প্রায় সব কাগজেই তাঁর নাটকীয় পদত্যাগের কথা ঢাউস করে ছাপা হয়েছে। কিন্তু সব জায়গায় সেই একই ভুল। তথ্যগত ভুল। সবাই তাঁকে ২০০৯ থেকেই দেখতে চাইছেন। সবার কথার মূল সূত্র, ২০০৯ ও ২০১৪ তে তিনি ব্যারাকপুর থেকে লোকসভায় জেতেন। ২০১৯ এ হেরে যান। তারপর তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়।
এই তথ্যে কোনও ভুল নেই। কিন্তু এটা অসম্পূর্ণ তথ্য। দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কটা মোটেই ২০০৯ থেকে নয়। তৃণমূলের প্রথম রাজ্যসভা সাংসদের নাম দিনেশ ত্রিবেদী। ২০০২ সালে এই রাজ্য থেকে তৃণমূলের একজনই রাজ্যসভায় যেতে পারতেন। এই রাজ্যের কাউকে প্রার্থী না করে গুজরাট থেকে আসা দীনেশ ত্রিবেদীকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তিনি সেবার জিতেওছিলেন। অর্থাৎ, ২০০২–২০০৮ এই ছয় বছরও তৃণমূলের এমপি ছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী।
কিন্তু কোনও চ্যানেল বা কোনও কাগজে সেই উল্লেখ দেখলাম না। এমনকী যাঁরা তাঁর মূণ্ডপাত করছেন, সেই তৃণমূল নেতারাও বলে চলেছেন, মমতা ব্যানার্জি তাঁকে দুবার লোকসভার এমপি করেছেন। লোকসভায় হারার পরেও রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন। তিনি সেই কৃতজ্ঞতা ভুলে গিয়ে দল ছাড়লেন। তিনি বেইমান, তিনি মধ্যসত্ত্বভোগী ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁরাও ২০০২–০৮ এর ব্যাপারটা উল্লেখ করছেন না।
এখানেই প্রশ্ন। কারা বিবৃতি দিচ্ছেন? কারা টিভির আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন? কারা খবরের চ্যানেলের মাথা হয়ে বসে আছেন? কারা কাগজ চালাচ্ছেন?
মস্তবড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন দীনেশ ত্রিবেদী।