রক্তিম মিত্র
যে কোনও গুন্ডামিকে আড়াল করা যেন সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু আড়াল করেই থেমে যাচ্ছে না। সেই গুন্ডামিকে উৎসাহিত করাই যেন প্রশাসনের বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়
জেপি নাড্ডার কনভয়ের ওপর হামলায় তা আরও একবার সামনে চলে এল। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি সভা করতে এসেছেন। সেই সভা থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, শাসকদলের বিরুদ্ধে বলবেন, সেটা খুব স্বাভাবিক কথা। নতুন কী আর বলতেন? চ্যানেলে বা কাগজে বিষয়টা তেমন জায়গাও পেত না। মানুষের মধ্যে এই সভার তেমন সাড়াও পড়ত না।
কিন্তু সেই সভাকে আরও প্রাসঙ্গিক করার দায়িত্ব নিয়ে নিল তৃণমূল। নাড্ডার কনভয়ে হামলা করা খুব জরুরি ছিল? এতে যে নাড্ডার সফরকেই বাড়তি অক্সিজেন দেওয়া হল, এই বোধটুকুও বোধ হয় হারিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ। হামলার নেতৃত্বে গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বা সওকত মোল্লাদের দেখা গেছে। প্রকাশ্যেই মঞ্চ থেকে প্ররোচনা দিয়েছেন। সেসব ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। এর ফল কী হতে পারে, তৃণমূল নেতৃত্ব একবারও ভেবে দেখেছেন! এর ফলে মেরুকরণের প্রচার বা সাম্প্রদায়িক প্রচার বাড়তি মাত্রা পাবে, এটা বোঝার মতো বুদ্ধিও হারিয়ে ফেলেছেন।
মুশকিল হল, এর পর প্রশাসন তৃণমূলের সুরেই কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ সুপার থেকে মুখ্যসচিব ডাঁহা মিথ্যে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের হাসির ও বিরক্তির পাত্র করে তুলছেন। যুব নেতা অন্য এক সভা থেকে বলে বসলেন, এনআরসি, সিএএ নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই এটা জনরোষ।
চমৎকার! এমন নেতা যে দলের সম্পদ, সেই দলের বিপদ কে ঠেকায়! অন। দলের নেতাকে আক্রমণ করছেন তাঁর অনুগামীরা। আর তিনি খাড়া করছেন জনরোষের তত্ত্ব। অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনার ফল কী হচ্ছে, বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছেন। এবার এই জনরোষের ফল যে কী মারাত্মক হতে পারে, তা হয়ত ভেবেও দেখেননি। একদিন হিংসা ছড়ানোর এই প্রবণতাও ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। আজ যাঁরা জনরোষের তত্ত্ব খাড়া করে গুন্ডামিতে ইন্ধন দিচ্ছেন, একদিন সেই জনরোষ হয়ত সত্যি সত্যিই তাঁদের ওপরেই আছড়ে পড়বে। সেদিন এমনকী দলের লোকেদের কাছ থেকেও ন্যূনতম সহানুভূতিটুকুও পাবেন না।