তদন্তে গতি!‌ এবার বরং সিবিআই–‌টাই তুলে দেওয়া হোক

সরল বিশ্বাস
মাঝে মাঝেই শোনা যায়, সারদা মামলায় সিবিআই তদন্তে নতুন গতি আসছে। চ্যানেলে চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ। সন্ধের স্টুডিওতে চণ্ডীমণ্ডপও বসে যায়। একদল বলেন, এবার সিবিআই তদন্তে বোঝা যাবে, কারা অপরাধী। তারা জেল খাটবে। একদল বলবে, এটা কেন্দ্রের চক্রান্ত। এভাবেই বিরোধী দলকে তারা সমস্যায় ফেলে।

আচ্ছা বলুন তো, সিবিআই নামক সংস্থাটাকে রাখার আর কোনও যুক্তি আছে?‌ এটা তুলে দিলেই তো হয়।

যে যখন বিরোধী থাকে, সে অভিযোগ করে, সিবিআই–‌কে সরকার পরিচালনা করে। আবার যে যখন সরকারে থাকে, সে বলে, আইন আইনের পথেই চলবে। বছরের পর বছর এই চিত্রনাট্য দেখে দেখে সাধারণ মানুষ ক্লান্ত।

cbi

প্রায় সাত বছর ধরে চলছে এই সিবিআই তদন্তের নামে প্রহসন। এখনও নাকি তদন্তে গতি আসবে। পাড়ার পাঁচুগোপালকে তদন্তের ভার দিলে সেও কিছু না কিছু প্রমাণ ঠিক জোগাড় করত। কিছু না পারলে অন্তত পেঁদিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করত। সিবিআই সেটুকুও পারে না। এমন সীমাহীন ব্যর্থ ও নির্লজ্জ প্রতিষ্ঠান দেশে আর আছে কিনা, তা নিয়ে একটা বিতর্ক হতে পারে। কেন্দ্র যখন ঘড়িতে দম দেয়, তখন তদন্ত চলতে শুরু করে। আবার যখন শীতঘুমে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন সে দিব্যি শীতঘুমে চলে যায়।

বরং সিবিআই এর অপদার্থতা সার্টিফিকেট হিসেবে কাজ করছে। বুক ফুলিয়ে সেই দুর্নীতিবাজরা বলে বেড়াতে পারছে, সিবিআই তো এত চেষ্টা করল। কিছু প্রমাণ করতে পারল?‌ ব্যাস, শুরু হয়ে যাচ্ছে মিষ্টি বিলি। ফুলের মালা হাতে অনুগামীরা তো রেডি আছেই। ‘‌বেকসুর খালাস’‌ লোকেরাও দিব্যি নির্লজ্জের মতো সেই মালা গলায় পরে নিচ্ছেন। যেন দেশকে বিরাট এক সম্মান এনে দিলেন। যেন ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ফিরছেন বা সততায় নোবেল প্রাইজ জিতে ফিরছেন।

যদি কোনও তদন্ত না হত, তাহলে অন্তত অভিযুক্তরা মাথা নিচু করে ঘুরত। তারা জানত, প্রমাণ থাক বা না থাক, পাবলিক বুঝে গেছে, তারা অপরাধী। কিন্তু এতে তারা গলা ফুলিয়ে বলতে পারছে, সততা নিয়ে লেকচার দিতে পারছে। তাদের দেখে বাকিরাও ভাবছে, ঠুঁটো জগন্নাথ সিবিআই–‌এর কোনও মুরোদ নেই। দুর্নীতি করলেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। সিবিআই হয়ে উঠছে অপরাধীদের ভরসার ঠিকানা।

যুক্তি–‌পাল্টা যুক্তি চলবে। কাদা ছোড়াছুড়িও চলবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ নির্বাক দর্শক। তারা বড়জোর কাগজ পড়ে বা টিভির বিতর্ক দেখে পাড়ার চায়ের দোকানে একটু গুলতানি করবেন। একদল দায়ী করবে তৃণমূলকে। একদল দায়ী করবে বিজেপি–‌কে। কিন্তু কিন্তু আসল অভিযুক্তরা আড়ালেই থেকে যাবে। যারা অভিযুক্ত, তাদের তবু ক্ষমা করা যায়। কিন্তু সিবিআই নামক যে অপদার্থ প্রতিষ্ঠানটি আমার–‌আপনার করের টাকায় পোষা হচ্ছে, তার কি সত্যিই কোনও যুক্তি আছে। যোজনা কমিশন থেকে শুরু করে কতকিছুই তো উঠে গেল। এবার সময় এসেছে, সিবিআই নামক প্রতিষ্ঠানটাকেই তুলে দেওয়া হোক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.