ইলাস্ট্রেশন যতদিন থাকবে, শৈলবাবুও থাকবেন

সংহিতা বারুই

কত তারিখ নিঃশব্দে পেরিয়ে যায়। আমরা জানতেও পারি না। হঠাৎই চোখ আঁটকে গেল সোশাল সাইটের একটি পোস্টে। দিনটা শৈল চক্রবর্তীর মৃত্যুদিন। এই প্রজন্মের কাছে নামটা হয়ত তেমন পরিচিত নয়। এমনকী যাঁরা মাঝবয়সী, তাঁদের কাছেও অচেনা ঠেকতে পারে। কিন্তু যাঁরা সাহিত্য, সংস্কৃতির খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে একজন প্রণম্য মানুষ এই শৈল চক্রবর্তী।

shoila chakraborty3
একটি সৃষ্টির সঙ্গে অনেক নাম জড়িয়ে থাকে। আবার একটি নামের সঙ্গে অনেক সৃষ্টিও জড়িয়ে থাকে। পথের পাঁচালি বললে বিভূতিভূষণের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের নামও এসে যায়। তিনিই এর প্রচ্ছদ তৈরি করেন। এমন কত বিখ্যাত লেখার প্রচ্ছদ বানিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের গল্পের ইলাস্ট্রেশন!‌ এই কৃতিত্ব শৈল চক্রবর্তীর। শিবরাম আর শৈল যেন যুগলবন্দী। তাঁর দুরন্ত ইলাস্ট্রেশন ছাড়া হর্ষবর্ধন বা গোবর্ধন হয়ত এই জনপ্রিয়তা পেত না। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায়া তাঁর ল্যাবরেটরি ও প্রগতি সংহার গল্পের ছবি এঁকেছিলেন শৈলবাবু। কত প্রচ্ছদ, কত কার্টুন জীবন্ত হয়ে আছে তাঁর তুলিতে। ব্রাজিলের রিয়ো-ডি-জেনেরো এবং আমেরিকার নিউ জার্সিতে তাঁর শিল্পকর্মের একক প্রদর্শনীও হয়।

shoila chakraborty2
একটা জায়গায় থেমে থাকা নয়। নতুন নতুন মাধ্যমে পরীক্ষা–‌নিরীক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। বিদেশে গিয়ে শিখে এসেছিলেন পুতুল নাচের নানা প্রকরণ। কিনে এনেছিলেন নানা উপাদান। এই বাংলায় পুতুল নাচ অনেক দিনের লোকাচার। কিন্তু আধুনিক পুতুল নাচের জনক এই শৈলবাবুই। নিজেই পুতুল তৈরি করতেন। সেই পুতুলগুলো যেন অনেক না বলা কথাই বলে যেত।
আধুনিক প্রজন্ম হয়ত তাঁকে চিনবে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর বাবা হিসেবে। কোনও সন্দেহ নেই, চিরঞ্জিৎ গত সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত নাম। কিন্তু বাংলা কার্টুন বা ইলাস্ট্রেশনে শৈলবাবুর নামও লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.