বিনয় তামাংরা দেওয়াল লিখনটা এখনও পড়তে পারছেন না!‌

চন্দ্রজিৎ সান্যাল

এমন একটা চমকের জন্য তাঁরা বোধ হয় তৈরি ছিলেন না। পুজোর আগেই হঠাৎ করে বিমল গুরুংয়ের আবির্ভাব ঘটবে, তাও আবার কলকাতায়!‌ অথচ, এই গুরুং–‌রোশন গিরিরাই তিন বছর ধরে ফেরার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। রাজ্য সরকার নাকি তাঁদের হন্যে হয়ে খুঁজছিল। সবমিলিয়ে প্রায় শ দেড়েক মামলা দেওয়া হয়েছিল তাঁদের নামে।

সেই বিমল প্রেস কনফারেন্স করলেন। তাও আবার কলকাতার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে। বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর পাহাড়ে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা।

তাহলে বিনয় তামাং–‌অনীত থাপারা কী করবেন?‌ এতদিন ধরে বলে আসছিলেন, বিমল গুরুংকে পাহাড়ে উঠতে দেওয়া হবে না। এতদিন ধরে বলে এসেছেন, পাহাড়ের যাবতীয় অশান্তির জন্য বিমল গরুংই দায়ী। আমরা রাজ্যের সঙ্গে চলতে চাই।

bimal gurung

তৃণমূলও ভেবেছিল, বিমল গুরুংকে পেছন থেকে সমর্থন করে গেলে আস্তে আস্তে গুরুং পায়ের তলার মাটি হারাবেন। বছরের পর বছর জিটিএ–‌র মেয়াদ বাড়িয়ে গেলেন। বিনয়দের যাবতীয় সরকারি সুবিধা দিয়ে গেলেন। কিন্তু এরপরেও পায়ের তলার মাটি শক্ত হল না। লোকসভায় পাহাড়ে তৃণমূলকে হারতে হল চার লাখেরও বেশি ভোটে। যে পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে এত ঢক্কানিনাদ, সেই পাহাড়েই কিনা সবথেকে বেশি ভোটে হারতে হল!‌ এমনকী দার্জিলিংয়ের বিধানসভা উপনির্বাচনেও বিনয় তামাং নিজে হারলেন চল্লিশ হাজার ভোটে।

মোদ্দা কথা, বিনয় তামাংদের দিয়ে যে কিছু হওয়ার নয়, সেটা তৃণমূল নেত্রী হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন। তাই আবার সেই গুরুংদেরই ডেকে আনতে হল। এবার একে একে মামলা তুলে নেওয়া হবে। তৃণমূলের কোনও নেতারই আপাতত গুরুং বিরোধী মন্তব্য করার হিম্মৎ নেই। তাঁদেরও গুরুংকে স্বাগত জানাতে হবে।

binay tamang

বিনয় তামাংরা কার্শিয়াং, কালিম্পঙে নাকি বিশাল মিছিল করলেন। তাঁদের দাবি, পাহাড়ে অশান্তির মূলে বিমল গুরুং। তাঁকে পাহাড়ে ফেরানো চলবে না। কাকে বার্তা দিতে চাইলেন?‌ এসব হুঙ্কার দিয়ে কোনও লাভ হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এইসব কথা বলতে পারবেন?‌ নবান্নে ডাক পড়েছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলবেন, গুটি গুটি পায়ে তাই মেনে নিতে হবে। তৃণমূলের কাছে তাঁদের যে আর আলাদা কোনও কদর নেই, এই দেওয়াল লিখনটা বিনয়রা পড়ে নিলেই ভাল। সহজ কথা, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এখন বিমলের গুরুত্ব অনেক বেশি।

তাহলে বিনয়রা কী করবেন?‌ হয় বিমলের পাহাড়ে ফেরা মাথা নিচু করে মেনে নেবেন?‌ নইলে কোনও একটা রফাসূত্র বেরিয়ে আসবে। জিটিএ দেখবেন বিনয়রা। অন্যদিকগুলো দেখবেন বিমল। অথবা, যে বিজেপিকে এতদিন গালমন্দ করেছেন, সেই বিজেপি শিবিরে ভিড়তে হবে। যে তৃণমূল নেত্রীকে মাথায় তুলে রেখেছিলেন, এবার তাঁকেই গালমন্দ করতে হবে। রাজনীতি সত্যিই সম্ভাব্যতার শিল্প। বন্ধু কখন যে শত্রু হয়ে যায়!‌ শত্রু কখন যে বন্ধু হয়ে যায়!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.