‌যা ঝুঁকি নেওয়ার, এখনই নিতে হবে

অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়

গুঞ্জনটা চলছিল অনেকদিন ধরেই। সেই গুঞ্জন থামার কোনও লক্ষণ নেই। বরং দিন দিন আরও বাড়ছে। কী করবেন শুভেন্দু অধিকারী?‌ অনেকগুলি জল্পনা ভেসে আসছে। কখনও শোনা যাচ্ছে, তিনি আলাদা দল গড়তে পারেন। সেই দল বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে। বিভিন্ন জেলায় প্রায় পঞ্চাশখানা আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। আবার কোনও কোনও মহল মনে করছে, তিনি সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।
রাজনীতির একজন ছাত্র হিসেবে মনে হয়, শুভেন্দু দ্বিতীয় পথটাই বেছে নেবেন। সরাসরি নতুন দল গড়লে সেই দলের পরিচিতি তৈরি করা বেশ সময় সাপেক্ষ। তৃণমূলের জন্ম দিয়ে মমতা ব্যানার্জি যেটা করতে পেরেছিলেন, শুভেন্দুর পক্ষে বাংলা জুড়ে সেটা করা সম্ভব নয়।
২)‌ মমতা বিরোধী পরিসর দখল করতে পেরেছিলেন। শুভেন্দুর পক্ষে সেই স্পেসটা নেওয়া সম্ভব নয়। তৃণমূল বিরোধী ভোটের মূলস্রোত আসবে বিজেপির দিকে। তাছাড়া, বাম–‌কং জোট তো আছেই। এর মাঝে দু তিনটি জেলার ওপর নির্ভর করে আঞ্চলিক দল গঠন করতে গেলে তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়া কঠিন।

subhendu2
৩)‌ অধিকারী পরিবারের নিজস্ব একটা ভিত্তি আছে ঠিকই। তবে তা মূলত দু–‌তিনটি জেলায়। অন্যান্য জেলায় এই দল কতটা ছাপ ফেলতে পারবে, সন্দেহ আছে।
৪)‌ নতুন দল মানেই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। শিশিরবাবুর বয়স হচ্ছে। শারীরিকভাবেও সুস্থ নন। দিব্যেন্দু সাংসদ ঠিকই, তবে নিজস্ব পরিচিতি এখনও তৈরি করতে পারেননি। এখনও তিনি নিছক শুভেন্দুর ভাই বা শিশিরাবুর ছেলে। ফলে, একা শুভেন্দুর পক্ষে দল চালানোর অর্থ জোগাড় করা মুশকিল।
৫)‌ মমতা যে মিডিয়ার আনুকূল্য পেয়েছিলেন, তা শুভেন্দু কখনই পাবেন না। তিনি মমতার বিরুদ্ধে বা অভিষেকের বিরুদ্ধে যা বলবেন, তা ছাপার হরফে বেরোবে কিনা সন্দেহ। চ্যানেলেও হয়ত সেন্সর করা হবে। গত দু তিন বছরে শুভেন্দু কতটুকুই বা প্রচার পেয়েছেন?‌
৬)‌ নতুন দল হলে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষুব্ধরা হয়ত যোগ দিতে চাইবেন। তার ফল কী হতে পারে, শুভেন্দু বেশ ভালই বোঝেন। একের পর এক মিথ্যে মামলায় জড়ানো হবে। মালদা, মুর্শিদাবাদ বা বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় শুভেন্দু নিজেও এই কাজে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও পুলিশকে আরও নগ্নভাবে ব্যবহার করা হবে। শুভেন্দুর পক্ষে জেলায় জেলায় কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন।
৭)‌ নন্দীগ্রাম পর্বে শুভেন্দুর ভূমিকা ছিল ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বিরোধী একটা হাওয়াও সঙ্গে ছিল। তাছাড়া, তখন বাম সরকার‌ ছিল। সরকার হিসেবে বর্তমান সরকার কতটা প্রতিহিংসা পরায়ণ, এটা শুভেন্দু বেশ ভালই জানেন। সরকারি পাইলট ও পুলিশ নিয়ে নেতাগিরি করা এবং এগুলো ছাড়া বিরোধিতা করা–‌এই দুটোর মধ্যে আকাশ–‌পাতাল তফাত।

subhendu
৮)‌ আবার তিনি এতটাই এগিয়ে গেছেন, তাঁর পক্ষে তৃণমূলে থেকে যাওয়াও কঠিন। তৃতীয়বারের জন্য যদি মমতা মুখ্যমন্ত্রী হন, চূড়ান্ত তাচ্ছিল্য ও উপেক্ষার শিকার হতে হবে শুভেন্দুকে। আস্তে আস্তে ডানা ছাঁটা হবে। হয়ত গুরুত্বহীন দপ্তর দেওয়া হবে। বুঝিয়ে দেওয়া হবে, না পোষালে চলে যাও। তখন শুভেন্দুর যাওয়ারও জায়গা থাকবে না।
৯)‌ তাই যা করার, এখনই করতে হবে। যা ঝুঁকি নেওয়ার, এখনই নিতে হবে। নইলে, আগামীদিনে তাঁকেও রাবার স্ট্যাম্প হয়েই কাটাতে হবে। অভিষেকের নেতৃত্ব মেনেই রাজনীতি করতে হবে।
১০)‌ সবমিলিয়ে আলাদা দল নয়। তাঁকে ঝুঁকতে হবে বিজেপি শিবিরের দিকেই। তাঁর উচ্চাকাঙ্খা থাকতেই পারে। হয়ত ভেবেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রোজেক্ট করা হবে। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। আরও অনেক দরজাই খোলা রাখতে চাইছে বিজেপি। তবে বিজেপি সরকারে এলে তাঁর যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই অনেক লাভ–‌ক্ষতির অঙ্ক কষেই পথ চলতে হচ্ছে। তাই আলাদা দল নয়, সরাসরি পদ্মফুলের প্রতীকেই হয়ত দেখা যাবে তাঁকে। বাকিটা সময় বলবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.